ন্যাভিগেশন মেনু

মোদি-মমতা’কে শ্বশুড় বাড়ির হাড়িভাঙ্গা আম পাঠিয়ে সৌহার্দের বার্তা শেখ হাসিনার


সৌহার্দের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ,  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী,পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের জন্য দেশজোড়া খ্যাতি হাড়িভাঙা আম উপহার পাঠালেন।

শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার লালদীঘীবাজার সংলগ্ন।  হাড়িভাঙ্গা আম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব প্রিয়।  ভারতে এই জাতের আম পাওয়া যায় না। তিনি শুভেচ্ছা হিসেবে ভারতের নেতাদের কাছে এই আম পাঠিয়েছেন। ঢাকার আধিকারীকরা বলছেন, এটার সঙ্গে কূটনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে সেরা উপহার পাঠাতে রংপুরের ওই সুস্বাদু হাড়িভাঙা আমের সংগ্রহ, প্যাকেজিংসহ গোটা বিষয়টি দেখভাল করতে ঢাকায় বিদেশ মন্ত্রকের ছয়জন কর্মকর্তাকে রংপুরে পাঠান। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা জন্য রবিবার ২ হাজার ৬০০ কেজি এবং সোমবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের জন্য শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে ৩০০ কেজি হাড়িভাঙা আম পাঠিয়েছেন হাসিনা।

সোমবার শেখ হাসিনার এই উপহার পেয়ে আপ্লুত বিপ্লব দেব। তিনি ট্যুইট করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ট্যুইট-‘বাংলাদেশের মাননীয়া পিএম শেখ হাসিনাজির উপহার পেয়ে আমি আপ্লুত। বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার জোবায়েদ হুসেন আজ হাসিনাজি প্রেরিত আম তুলে দেন।

আমি বাংলাদেশের মাননীয়া পিএমকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। মাননীয় পিএম নরেন্দ্র মোদিজির নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী অটুট থাকুক, এই কামনাই করি। আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনার জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত আমগুলির একটি হল এই হাড়িভাঙা আম। সুস্বাদু হাড়িভাঙা আম পাঠানো হচ্ছে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা’কেও।

 ৭৫ বছর আগে খোড়াগাছ তেকানিপাড়ার নফেল উদ্দিন পাইকার মিঠাপুকুরের বালুয়া মাছুমপুরের তাজ সিং জামিদারের বাড়ি থেকে সুস্বাদু যে আমের চারা রোপন করেছেন আজ তা মহিরুহে পরিনত হয়েছে, দরিদ্র প্রবণ রংপুরের মানুষের প্রধান অর্থকরী ফল হিসেবে সুনাম ছাড়িয়েছে দেশময়।

রংপুরে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২১ জুন থেকে। এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আম পণ্য পরিবহনের জন্য বাস-ট্রাকেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আম ব্যবসায়ীদের বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাসহ তাঁদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

এরও আগে ৭ জুন মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আমচাষিদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান।

সেখানে আম পরিপক্ব হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয় ২০ জুন। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ মেসবাহুল ইসলাম বলেন, এলাকায় প্রায় ১৭ লাখ হাঁড়িভাঙা আমগাছ রয়েছে। এ বছর জেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৭ হাজার মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ও রানীপুকুর ইউনিয়ন, পদাগঞ্জ এলাকাসহ আরও কিছু এলাকায় আমের বাগান রয়েছে।

খোড়াগাছ এলাকার আমচাষি আবদুল আলীমের তিন বিঘা জমির ওপর আমবাগান। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এবারও অনেক দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু সেটা অনেকটা কেটে গেছে। জুনের শুরুতে হলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসেছেন।

লালপুকুর এলাকার হেলাল মিয়ার এক একর জমির ওপর আমবাগান। তিনি বলেন, ‘এখানে আমের পরিবহন নিয়ে সমস্যা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আম পরিবহনের বিষয়টি প্রশাসনের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মিঠাপুকুর উপজেলার বকসিপাড়া এলাকার আমচাষি মনসুর আলী এক বিঘা জমিতে আম চাষ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এবার আমের ফলন ভালো। গাছের আম প্রকারভেদে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি অধিদপ্তরের হিসাবে প্রতি হেক্টরে ৩০০ মণ আম উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রতি মণ আম ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হেক্টরপ্রতি আম বিক্রি থেকে চাষিদের আয় হচ্ছে প্রায় চার লাখ টাকার ওপরে।

এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিলে চাষিদের হেক্টরপ্রতি লাভ থাকছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ও উৎপাদন ভালো। তবে করোনা অবরুদ্ধতায় আম বিক্রি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন আমচাষিরা। হাট বাজারে লকডাউন সমস্যায় বেচাকেনায় ঘটছে নানা বিড়ম্বনা।

কৃষি বিপণনের মাধ্যমে অনলাইনে চাহিদা অনুযায়ী বিআরটিসির মাধ্যমে আম পরিবহনের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় সমস্যা নিরসন ঘটেছে আমচাষীদের।ভারত-বাংলাদেশের সৌজন্য বিনিময় নতুন নয়। প্রতি বছরই একাধিকবার এই ধরনের সৌজন্য বিনিময় দেখা যায়।

এরআগে রবিবার দুপুরে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে দু’দেশের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে আম বিনিময় হয়। ভারতের সরকারি আধিকারিকদের হাতে উপহার তুলে দেন বাংলাদেশের আধিকারিকরা। দু’দেশের আধিকারিকদের মতে, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্যই এই আম পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের তরফ থেকে।

এই সৌজন্য বিনিময়ের মাধ্যমে আগামী দিনে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। গত মার্চের শেষার্ধে বাংলাদেশ সফর করে  গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভাল। তারই প্রতিফলন হিসেবে এই সৌজন্য বিনিময়।

 এদিকে ভারতে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিত্বদেরকে এলাকার আম উপহার পাঠানোর কারণে রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আমচাষী ও সাধারণ মানুষ বেজায় খুশি।  আম পাড়ার ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসন দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেয়।

যেন লোকে আসল আমটি পেতে পারেন। মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকায় যে দিকে চোখ যায় গাছে গাছে ঝুলে আছে হাড়িভাঙ্গা আম। আবহাওয়া ভালো থাকায় ও পোকার উপদ্রপ না থাকায় এ বছর অন্য কয়েক বছরের তুলনায় ফলন হয়েছে ভালো। দাম ভালো থাকায় খুশি আম চাষীরা। তবে করোনা পরিস্থিতিতে প্রথমদিকে পাইকার ও ক্রেতা না থাকা এবং আম বিক্রিতে নানা বাঁধায় চিন্তার ভাজ ছিল আম চাষীদের কপালে।

করোনা পরিস্থিতিতে আম বিক্রিতে সহায়তার জন্য চাষীদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এতে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে কৃষি বিভাগ ও উপজেলা পরিষদ।

কৃষি বিপণন সংস্থার মাধ্যমে অনলাইনে চাহিদার ভিত্তিতে মিঠাপুকুর উপজেলার ৪টি হাটে সরকারি বিআরটিসির মাধ্যমে আম সরবরাহের প্রণোদনার কথা জানান জেলা প্রশাসক।এতে করোনা অবরুদ্ধতায় চাষীদের উৎপাদিত আমের ন্যায্য মূল্য পাবে বলে দাবি উপজেলা চেয়ারম্যানের।

আঁশহীন সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এই আমের সংরক্ষন সুবিধা বাড়াতে গবেষণার কথা জানান রংপুর কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড: মো:সরওয়ারুল হক।

 এদিকে কৃষি নির্ভর দেশের উত্তরবঙ্গ রংপুরের দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানে হাড়িভাঙ্গা আমের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে আম চাষ,বাড়ছে উৎপাদন,পরিবতিত হচ্ছে রংপুরের গ্রামীন কৃষি অর্থনীতি। গত ৩ বছরের চেয়ে জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার বেশি ১ হাজার ৭শ ৫০ হেক্টরে চাষ হয়েছে হাড়িভাঙ্গা আম।

উৎপাদনও হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার বেশি ২৬ হাজার মেট্রিকটন। আম্পানের ঝড়ে ২৫ মেট্রিকটন আমের ক্ষতি হলেও বাজার ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষীরা।রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আমের সম্প্রসারক আব্দুস সালাম জানান, স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় আমাদের এই হাঁড়িভাঙ্গা আম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি’র কাছে পাঠিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই হাড়িভাঙ্গা আম আবাদে আরো উৎসাহীত করবে।

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান জানান, হাড়িভাঙ্গা আম ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে পাঠিয়ে মাননীয় প্রধান রংপুরের শুনাম বহির্বিশ্বে আরো অন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করলেন। এই উপহারের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যে বন্ধুত্বের নির্দশন রেখেছে তাতে ভারত সরকার সত্যিই কুর্ণিশ জানায়।

বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হলো ভারত, তাই এই বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতি সৌহার্দ্য বিনিময় হিসেবেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার স্বরূপ এই আম পাঠিয়েছেন।

এস এস