ন্যাভিগেশন মেনু

১২৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রির নির্দেশ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক


চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, পাইকারী বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে যারা পেঁয়াজের ব্যবসা করছেন, তাদের সিংহভাগ কমিশন এজেন্ট ও আড়তদার। এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করলে কমিশন ৪০ পয়সা পান আড়তদাররা। ওটাই তাদের ব্যবসা। পণ্যের দাম বাড়ান আমদানিকারকরা। 

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে চট্টগ্রাম জেলার আমদানিকারকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক এ হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা উপস্থিত থাকলেও পেঁয়াজের কোন আমদানিকারক উপস্থিত ছিলেন না।ডিসি ও জেলা ম্যাজিস্টেট আবুল বশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করেন, আড়ত আপনার, ব্যবসা আপনার। তাহলে নিয়ন্ত্রণ কেন আমদানিকারকদের হাতে? 
 
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আড়তদারদের পক্ষে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশে পেঁয়াজের দর বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রশাসনের লোকজন আড়তে অভিযান পরিচালনা করে। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়। তারা পণ্য দিলে কোনো কাগজপত্র দেন না। আর সংকট দেখা দিলেই ফোনে নিদের্শনা দেন, ওই দামে বিক্রি করতে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সে অনুসারে বিক্রি করেন। দাম বাড়া বা কমার সাথে আড়তদারদের কোনো হাত নেই। আড়তদাররা পেঁয়াজ আমদানি করেন না। আমরা কমিশনের ভিত্তিতে পণ্য বিক্রি করি। আমাদের আমদানিকারকরা যেভাবে বলেন সেভাবেই বিক্রি করতে হয়। নাহলে পরবর্তীতে আমাদের তারা পণ্য দেন না।

এসব নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, আপনারা আমাদের আমদানিকারকদের নাম ও নম্বর দেবেন। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে ৯০ টাকায় কেনা পেঁয়াজ ১২৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। এখন থেকে ১২৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি অনুরোধ করছি। আপনারা যে পণ্যটি ক্রয় করছেন তার কাগজ রাখবেন। মুখে মুখে, টেলিফোনে বা ডিও প্রথার মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়ানো যাবে না। এটা করা হলে জেল-জরিমানাসহ কঠোর হবে প্রশাসন।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, পেঁয়াজের বাজার বর্ডারকেন্দ্রিক (বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ) নিয়ন্ত্রণ হয়। সেখানে আমাদের হাত থাকে না৷ বর্ডার থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে সে অনুযায়ী আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করি। বর্ডারে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী যাদের ভালো সম্পর্ক, তারাই এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকার চাইলেই তাদের এ সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে।

জেলা প্রশাসক বলেন, এখন থেকে চট্টগ্রামের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে যেসব গোডাউন রয়েছে সব গোডাউনের তথ্য নেওয়া হবে।  এ তথ্য নিশ্চিত করার জন্য আমরা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করব। গোডাউনের বাইরে পণ্য পাওয়া গেলে সেগুলো অবৈধ পণ্য হিসেবে জব্দ করা হবে। শুধু পেঁয়াজের ক্ষেত্রে নয়, চিনির ক্ষেত্রেও আমরা সব তথ্য চাইব। সব কাগজে কলমে থাকবে হবে। কাগজপত্রহীন কোনো কিছুই আমরা ছাড় দেব না। গোডাউন এমালামাল যতই থাকুক না কেন, আমরা সেটির রশিদ চাইব। রশিদ ছাড়া কোনো মালামাল পাওয়া গেলে সেগুলো আমরা নিলামে ন্যায্যমূল্যে জনসাধারণের মাঝে বিক্রি করে দেব। 

জেলা প্রশাসনের নিবার্হী ওমর ফারুক বলেন, আমরা আড়তে গিয়ে দেখেছি, কোনো আড়তদার ক্রয় রশিদ রাখেন না। আমরা বারবার জানিয়েছি, আপনারা ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ করবেন। আড়তদাররা এত কোটি টাকার ব্যবসা করেন, কিন্তু কোনো ক্রয় রশিদ রাখেন না তারা। অভিযানে গিয়ে দেখেছি, আড়ত ভর্তি পেঁয়াজ। অথচ বাইরে সাইনকোর্ডে লিখে রাখছে পেঁয়াজ নেই। এসব আড়তকে জরিমানা করেছি। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।
মতবিনিময়সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক অহীদ সিরাজ স্বপন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়দার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম, খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মার্কেট আড়তদার সমিতি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিসসহ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী ও জেলা প্রশাসনের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটরা।