ন্যাভিগেশন মেনু

নূহ (আঃ) ও সঙ্গীদের মহাপ্লাবন থেকে রক্ষায় আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত নৌকাই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক


সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ যিনি সর্বজ্ঞানী। তিনি সর্বদা উত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি হযরত নূহ (আ.)কে দুনিয়ায় পাঠিয়েলেন তাওহীদের দাওয়াত দিতে। হযরত নূহ (আ.) সাড়ে নয় শ’ বছর তাওহীদের দাওয়াত প্রচার করেন এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে বলেন, যা পবিত্র কুরআনে এভাবে এসেছে ‘আল্লাতাবুদু ইল্লাল্লাহ ইন্নি আখাফু আলাইকুম আযাবা ইয়াওমিন আলিম’ অর্থাৎ ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করোনা, অন্যথায় আমি আশংকা করছি যে, তোমাদের উপর একদিন বেদনাদায়ক আযাব আসবে।’ হযরত নূহ (আ.) এর দাওয়াত অধিকাংশ মানুষ গ্রহণ করে না; বরং যারা ইমান আনে তাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। অবশেষে নূহ (আ.) তাদেরকে বদ দোয়া করেন ‘হে আল্লাহ তুমি তাদের ধ্বংস করে দাও।’

মহান আল্লাহ নূহ (আ.) এর দোয়া কবুল করে তাঁকে জানিয়ে দেন মহাপ্লাবন হবে এবং ঈমানদারদের রক্ষার জন্য নৌকা (কিস্তি) তৈরির জন্য তাকে নির্দেশ দেন।

পৃথিবীর মানুষ জানত না নৌকা কীভাবে তৈরি ও ব্যবহার করতে হয়। মহান আল্লাহ নিজে নূহ (আ.)কে নৌকার আকার-আকৃতি ও তৈরির পদ্ধতি শিক্ষা দেন। নূহ (আ.) নৌকা তৈরি করেন। মহান আল্লাহ মহাপ্লাবন দেন। নূহ (আ.) ঈমানদার ব্যক্তিদের নিয়ে নৌকায় চড়ে মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পান আর অভিশপ্তরা পানিতে ডুবে ধ্বংস হয়ে যায়।

মানব কল্যাণে নৌকার সৃষ্টি পবিত্র কুরআন মাজীদে সুরায় জুখরুফ-এর ৪৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাযী খলাকাল আজওয়াজা কুল্লাহা অজায়ালা-লাকুম মিনাল ফুলকি ওয়াল আনামী মাতার কাবুন’ অর্থাৎ ‘যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদজন্তু ও নৌকা যাতে তোমরা আরোহন করতে পারো।’

হিযরতে নৌকার ব্যবহার দুশমনদের নির্যাতনে মুসলমানরা দেশ ছেড়ে আবিসিনিয়ায় গমনে মহান আল্লাহ নৌকার মাধ্যমে তাঁদের ঈমান রক্ষা করেছিলেন।

হযরত ইউনুস (আ.)-এর তাওহীদের দাওয়াতের ব্যাপারে নৌকার ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের ভারত উপমহাদেশে আরব ধর্মযাজকদের আগমন নৌকার মাধ্যমে ঘটেছিল।

এসব ঘটনা অনুধাবন ও পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামে নৌকার তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি। এই নৌকা মানুষের ব্যবহারের জন্য মহান আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত।

আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মের প্রতি ছিল অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। তিনি বক্তৃতা-বিবৃতি শেষে ইনশাহ আল্লাহ বলতেন। দীর্ঘ ২৩ বছরে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে ১৯৭ সালে যখন ভোট ব্যবস্থায় উপনীত হন, তখন তিনি চরম ধর্মীয় অনুভূতি, আস্থা ও বিশ্বাস থেকে মহান আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত নৌকাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বেছে নেন। মহান আল্লাহ তাঁকে উপযুক্ত মর্যাদার সাথে কামিয়াবী করেছিলেন।

মহান ’৭১-এ বিজয় অর্জনের পর দেশসেবার দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রথমে মদ, জুয়া ও হাউজির লাইসেন্স বাতিল করেন। পাশাপাশি ইসলামের প্রচার ও প্রসারে করতে তাবলিগ জামায়াতের জন্য কাকরাইল মসজিদের জমি বরাদ্দ, টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমার জায়গা, ইসলামী ফাউন্ডেশন গঠন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন এবং বেতার ও টিভিতে কুরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করেছিলেন। এগুলো ধর্মের প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস ও আস্থার প্রতিফলন। তাঁরই হাতে এদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের উজ্জল দৃষ্টান্ত রয়েছে। পবিত্র কোরআন মাজীদে সুরায়-কাফেরুনে উল্লেখ আছে, ‘লাকুম দ্বীনু-কুম ওয়াল ইয়াদ্বীন।’ অর্থাৎ ‘যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে।’

সূরা বাকারায় উল্লেখ আছে, ‘লা-ইকরাহা ফিদ্বীন।’ অর্থাৎ ‘ধর্মের বিষয়ে কারও উপর জুলুম করা যাবে না।’ এ দেশে হাজার বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা অসম্প্রদায়িক চেতনায় বসবাস করে আসছেন। পবিত্র কুরআনের শ্বাশত বাণীর মর্ম জেনে এবং বুঝে তিনি অনুধাবন করেছিলেন একটি দেশে সব ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু মনে করতেন এ দেশে সব ধর্মের মানুষ যাতে নির্ভয়ে ও নিরাপদে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারেন, সে জন্য ১৯৭২ সালে তিনি দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি যুক্ত করেছিলেন। স্বাধীনতার পরে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় বাসনা থেকে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। আমাদের চরম দূর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধু তাঁর আজীবনের স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি। আজ তাঁরই যোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর আদর্শের পথেই হাঁটছেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা তিনি গড়বেনই।

গত ১৫ বছরে দেশে স্থিতিশীল অবস্থা থাকায় তিনি দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কাজ হাতে নিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন যেগুলো একটি দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির নির্দেশক।

শেখ হাসিনা যেসব কর্মসূচি ইতোমধ্যে হাতে নিয়ে সফল করেছেন তার উল্লেখযোগ্য হলো সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নে হাজার হাজার রাস্তাঘাট ব্রীজ ইত্যাদি নির্মাণ; দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন; দক্ষিণ বঙ্গের একুশ জেলার মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ; উন্নত বিশ্বের আদলে মেট্রোরেল নির্মাণ; তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের সুযোগ; অসংখ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন; স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন; চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল নির্মাণ; বেকারত্ব দূরীকরণে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা; পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন; পটুয়াখালী ও কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ; বহু গ্রামকে শহরে রূপান্তর; ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রায় ৫০ লাখ পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান; করোনা মহামারীকালে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিনামূল্যে টিকা প্রদান; এক কোটি পরিবারের ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষকে স্বল্প মূল্যে খাদ্য সরবরাহ; মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি; শিক্ষাখাতে ব্যাপক উন্নয়ন; দরিদ্র মানুষের সংখ্যা হ্রাস; দরিদ্র অসহায় মানুষের জন্য বহু ধরনের ভাতা প্রদান; ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে আশ্রয় দান; উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর ব্যাপক সম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণ; ঢাকা ও চট্টগ্রামে উড়াল সড়ক নির্মাণ; বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ।

শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের সাথে সাথে পিতার মতো ইসলামের ব্যাপক খেদমত করে চলেছেন। তিনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ইতোমধ্যে বহু মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছেন, যা ইসলামী গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্ম চর্চার পথ প্রশস্ত করেছে। পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি ও পিতার মতো সুদৃষ্টি দিচ্ছেন।

স্বাধীনতার পর থেকে দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ও তাদের মিত্ররা সব সময় দেশটাকে পিছিয়ে নিতে সক্রিয়।

কোনও দেশের উন্নয়নের জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির মানুষগুলোর যথাযোগ্য সেবা, কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য চাই নিবেদিতপ্রাণ নেতা। ক্ষমতার ঘনঘন পালা বদল হলে আগের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হয়। এক পক্ষ অন্য পক্ষের কাজকর্মকে ভাল চোখে দেখেনা। এতে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা পিছিয়ে পড়ে। আজকের মালয়েশিয়াকে মাহাথির মোহাম্মাদ দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সেবা করে মালয়েশিয়াকে বিশ্বের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে পৌঁছে দিয়েছেন, যে দেশে আমাদের ছেলেরাও কর্মের সন্ধানে ছুটছেন প্রতিনিয়ত।

ভোট মানুষের অতি মূল্যবান আমানত। এই মূল্যবান আমানতকে আমাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রয়োজন জীবন মানের উন্নয়ন এবং নিরাপদে বসবাস করা। তাই কে কতবার দেশ শাসন করল এটা বড় কথা নয়। কে আামাদের জন্য কত কাজ করলো সেটাই মূখ্য বিষয়। যে দলের হাত ধরে এসেছে দেশের মহান স্বাধীনতা, সেই দলের লোকজনের হাতে দেশ নিরাপদে থাকবে এটাই বাস্তবতা। এ কথাগুলো সামনে  রেখেই আমাদের নেতা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের ভুল হলে তার মাশুল গুনতে হতে পারে বহুদিন ধরে।

  • শিকদার মো. জিননুরাইন একজন লেখক, কবি ও কলামিষ্ট এবং টুঙ্গিপাড়ার ড. ইমদাদুল হক মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ