ন্যাভিগেশন মেনু

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে যক্ষা রোগীর সংখ্যা


কুষ্টিয়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যক্ষা রোগ নির্মূলে নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কুষ্টিয়ায় যক্ষা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, রোগ নির্ণয়ে শতভাগ নির্ভুল পদ্ধতি অবলম্বন এবং জনসচেতনা বৃদ্ধি পাওয়ায় কারণে জেলায় যক্ষা রোগী সনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিগত চার বছরের যক্ষা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে জেলায় যক্ষা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৬৪ জন। ২০১৮ সালে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৩৬ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় যক্ষা রোগীর সংখ্যা ৩৭২ জন বেড়েছে। আবার ২০১৯ সালে যক্ষা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮৬৮ জন। অর্থাৎ ২০১৮ সালের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৩২ জন। তবে গত বছর ২০২০ সালে যক্ষা রোগী সনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৯৩ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালে যক্ষা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়েও বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে মাঠ পর্যায় থেকে সঠিক তথ্য তুলে আনা সম্ভব হয়নি।

স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে যক্ষা রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দৌলতপুর উপজেলায়। এরপর কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও কুমারখালী উপজেলায়। আর সবচেয়ে কম যক্ষা রোগীর সংখ্যা হচ্ছে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে দৌলতপুর উপজেলায় ৯০৭ জন রোগী সনাক্ত হয়। ২০১৮ সালে সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭১ জন। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৯৩ জন এবং ২০২০ সালে ৮০৩ জন। ২০২০ সালে জেলার মধ্যে সর্বনিম্ন যক্ষা রোগীর সংখ্যা ছিল খোকসা উপজেলায় ২৭৭ জন। যক্ষা রোগী সনাক্তের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চারটি ফেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রথম ফেজ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত, দ্বিতীয় ফেজ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত, তৃতীয় ফেজ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং চতুর্থ ফেজ অক্টোবর মাস খেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত।

এদিকে চলতি বছরের প্রথম ফেজ অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত জেলায় যক্ষা রোগী সনাক্তের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ছুঁয়েছে। এরমধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় অক্রান্তের সংখ্যা ২০১ জন।

কুষ্টিয়ার জেলায় প্রতি বছর যক্ষা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কি? এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মানুষজনের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। মানুষ এখন একটু কিছু হলেই চিকিৎসকের কাছে ছুটে আসছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যক্ষা রোগী সনাক্তের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার হারও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে অত্যাধুনিক জিন এক্সপার্ট মেশিনের সাহায্যে যক্ষা রোগী সনাক্তের শতভাগ নির্ভুল পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।

তিনি জানান, কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে কুমারখালী এবং খোকসা উপজেলা ছাড়া বাকি চারটি উপজেলাতেই বর্তমানে জিন এক্সপার্ট মেশিনের সাহায্যে যক্ষারোগ সনাক্ত করা হচ্ছে। যে দুটি উপজেলায় এই মেশিন নেই সেটিও চলতি বছরই চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

কুষ্টিয়া জেলার সদর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলায় ব্যাপক হারে তামাকের চাষাবাদ হয়। সরেজমিন অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য বিভাগের অনেকেই মন্তব্য করেন, ব্যাপক হারে তামাক উৎপাদনের কারণে জেলায় যক্ষা রোগীর সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন বলেন, তামাকের কারণে যক্ষা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে না থাকলেও অনেকেই তামাকের কারণে যক্ষা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন বলে জানান তিনি।

কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলার মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে দৌলতপুর উপজেলা সবচেয়ে বড়। ভারত সীমান্তবর্তী এ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তামাকের চাষাবাদ হয়।

বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরের কাটাখানা মোড়স্থ কুষ্টিয়া বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিক, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলা এবং বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে বিনামূল্যে যক্ষা রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ব্র্যাকসহ কয়েকটি এনজিও যক্ষা নির্মূলে কাজ করছে। যক্ষা সম্পূর্ণ নির্মূলযোগ্য একটি রোগ। আক্রান্ত রোগীকে ৬ মাস এবং ক্ষেত্র বিশেষে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়।

কুষ্টিয়া বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে কর্মরত চিকিৎসক শারমিন আক্তার জানান, চলতি বছর এখন পর্যন্ত এই ক্লিনিকে ১৪৫ জনের যক্ষা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৩ জনের যক্ষা সনাক্ত হয়েছে।

আই আই/ এস এ /এডিবি