ন্যাভিগেশন মেনু

গৃহকর্মীদের জন্য আইনগত সুরক্ষা অপর্যাপ্ত


গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং তাদের উপর নির্যাতন বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই ঘটছে, কিন্তু তাদের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য কোন আইন নেই।

আইনি সুরক্ষার অভাবে গৃহকর্মীরা শারীরিক, মানসিক, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের সম্মুখীন হন। অনেক ক্ষেত্রে এর ফলে তাদের অকালমৃত্যু হয়।

গৃহকর্মী ইস্যুতে কাজ করা অনেক মানবাধিকার সংস্থা দাবি করে যে গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনের হার গণমাধ্যমে যা আসে তার চেয়ে অনেক বেশি। তারা বলেন, নিপীড়করা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগীরা আইনি সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার পায় না।

গৃহকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার সক্রিয় ভূমিকা না নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

রাজধানীতে অনেক গৃহকর্মীরা তাদের অসহায় পরিবারকে সহায়তা করার জন্য এখানে এসে মজুরি বৈষম্য ছাড়াও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের মোহাম্মদপুরের ফ্ল্যাট থেকে পড়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার প্রীতি উরাং (১৫) মারা যান।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই গৃহকর্মীর ‘রহস্যজনক মৃত্যুর’ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন প্রীতি উরাং-এর অভিভাবকরা এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।

গৃহকর্মীদের নির্যাতন বন্ধের জন্য ২০১৫ সালে একটি ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি’ প্রণীত হয়েছে। এই নীতিমালা গৃহকর্মীদের ভাগ্য পরিবর্তনে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি।

গৃহকর্মীর স্বার্থ রক্ষায় নয় বছর আগে নীতিমালা করা হলেও আইন প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি নীতিমালায় যা করার কথা বলা হয়েছে তার কিছুই করেনি সরকার।

নিয়োগ, কর্মঘণ্টা এবং ছুটির বিষয়ে নীতিমালায় যা বলা আছে তার কোনো বাস্তবায়ন আদতে নেই। সরকারের মনিটরিং সেল, হেল্পলাইন এবং নীতি প্রচারের কথা বলা হলেও কিছুই করা হয়নি।

যাদের জন্য এই নীতিমালা, তারা জানে না তাদের কী অধিকার আছে, এমনকি যারা গৃহকর্মী নিয়োগ করছে, তারাও জানে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, নীতিমালাটি আইন নয়, তাই মানার বাধ্যবাধকতা নেই। নীতিমালা অনুসরণ না করার জন্য কোন জরিমানা নেই। তাই অবিলম্বে আইন প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ সারা দেশে গত তিন বছরে ৩৬ জন গৃহকর্মী তাদের বাড়িওয়ালার বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ নির্যাতনের কারণে মারা গেছে - কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে। এসময় মোট ১০৩ জনকে নির্যাতন করা হয়। তবে এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ৬৯টি।

আসক-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৪৫০ গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় নির্যাতন ও অপমৃত্যুর প্রায় দুই শতাধিক মামলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, গৃহকর্মীদের নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা বেশি। আপনি যে সংখ্যাগুলি দেখছেন তা মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে। অনেক মামলাই মিডিয়ায় আসে না। এবং অনেক মামলার বিচার হয় না।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, সারাদেশে ২৫ লাখ গৃহকর্মী রয়েছে।গৃহকর্মীদের জন্য রয়েছে শুধু একটি নীতিমালা এবং নেই কোন মজুরি কাঠামো । ফলে তারা সরকারের সর্বনিম্ন মজুরি কাঠামোতে প্রবেশ করতে পারে না। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, ঈদ বোনাসসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত।

২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি বিলস সমীক্ষা বলছে যে ৮৪ শতাংশ গৃহকর্মী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাদের মাসিক গড় আয় ৫,৩১১ টাকা। গৃহস্থালির খরচ দ্বিগুণেরও বেশি।

যারা বাড়িওয়ালার বাড়িতে থাকেন তাদের কোন নির্দিষ্ট কাজের সময় নেই এবং তারা প্রতিদিন ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে। তারা নীতিমালা অনুযায়ী ছুটির সুবিধা পান না। ৮৭ শতাংশের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই। কম লোক অসুস্থ হলে ছুটি পান। মাত্র ৭ শতাংশ বেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি পান।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০২৩ সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু গৃহকর্মীরা এই আইনে অন্তর্ভুক্ত নয়। শ্রমিকের মর্যাদা না থাকায় তারা তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। নীতিমালা একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নয়; আইন দরকার।”