ন্যাভিগেশন মেনু

জাতিরজনকের নাম মুছে ফেলতেই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর


স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এখনো মেনে নেয়নি পাকিস্তানি দোসররা। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা। সুযোগ পেলেই আঘাত হানছে। তাই তারা ইতিহাস থেকে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলতেই তাঁর ম্যুরাল ভাঙচুর চালাচ্ছে। 

এবার এ কাণ্ডে আটক এক বৃদ্ধ। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা নিয়ে উত্তেজনা না কমতেই বছরের প্রথম দিনে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে দেশের উত্তরের জনপদ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌর শহরের পূর্ব চৌরাস্তায়  বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। 

আটক বৃদ্ধের নাম নূর আলম (৫৫)। তার বাড়ি শহরের রঘুনাথপুর গ্রামে। সে পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ওই ব্যক্তি বিকেলে শহরের পূর্ব চৌরাস্তায় নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ইট দিয়ে আঘাত করতে থাকে। 

স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। হাতেনাতে আটক করা হয় তাকে। ২০১৯ সালের মার্চের শেষ দিকে পীরগঞ্জে জাতির পিতার এই ম্যুরালটি তৈরি করা হয়। এর আগে রাজধানী ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল। 

তারা মাঠে নামার পর ডিসেম্বরের ৫ তারিখে দেশের পশ্চিমের জেলা কুষ্টিয়া জেলা জেলার পাঁচ রাস্তা মোড়ে জাতির পিতার নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। 

এই ঘটনায় স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসার দুই ছাত্র এবং তাদের দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইবনি মাসউদ নামে ওই মাদ্রাসাটি চরমোনাইয়ের পীরের অনুসারী। ওই মাদ্রাসার চারজন এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

তারা এখন কারাগারে বন্দী। গত ৫ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর কাণ্ডের দেশের জেলা-উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সসহ দেশের যে কোনো স্থানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব ম্যুরালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে বলেছে হাই কোর্ট।

সেই সঙ্গে এক মাসের মধ্যে জেলা-উপজেলা সদরে জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপনের অগ্রগতির বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিবকে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে আদালত বলেছিল, একাত্তরের যে দিনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে এক মাসের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।’

এছাড়া মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশের সব জেলা-উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করতে বলা হয় ওই আদেশে।এছাড়া ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ম্যুরাল তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ৩৮০টি উপজেলা এবং ৬৩টি জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে স্থাপন করে সম্মুখভাগে জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপন করেছে। আদালতের নির্দেশে মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যে ৭ মার্চকে ‘ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদের করা রিটে ৭ মার্চকে কেন ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস ‘ হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। 

একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্থানে, যে মঞ্চে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ভাষণ দিয়েছিলেন, একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, ১৯৭২ সালের মার্চে ব্ঙ্গবন্ধুর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ এবং কয়েকদিন পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল।

এবার  যেস্থানে সেই স্থানে মঞ্চ পুনঃনির্মাণ কেন করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘স্পিচ মোডের’ (তর্জনি উচিয়ে ভাষণের সময়কার ভঙ্গি) ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। 

সেই রুলের শুনানিতে রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিব ‘ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয়।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরেই পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর প্রায় এক লাখ পরাজিত পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে।  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে জেনারেল নিয়াজি। 

বিভিন্ন দেশের ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটে ‘ হিসেবে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করেছে ইউনেস্কো। 

এস এস