ন্যাভিগেশন মেনু

স্বপ্নের পদ্মাসেতু, কাছে এনে দিল দুই বাংলাকে


পদ্মা সেতুতে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুটি পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়ায়  আনন্দে-আবেগে ভাসছে বাংলাদেশের আপামর মানুষ। বৃহস্পতিবার ৪১তম শেষ স্প্যানটি স্থাপন করা হয়। শেষ স্প্যান বসার পর থেকেই শুধু বাংলাদেশিরাই নয়- পশ্চিমবঙ্গবাসীরাও অধীর আগ্রহে দিন গুণছেন ২০২২ সালের জুনের মাঝামাঝি অবধি- সেতু উদ্বোধনের দিনটির জন্য।

এখন ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে-আসতে ১২ ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। সেতু চালু হলে এ সময় নেমে আসবে ছয় ঘণ্টায়। তাই সবাই দিন গুনছেন কবে পদ্মা নদী পাড়ি দেবেন এই স্বপ্নের সেতু দিয়ে। এখন সেতুর ওপর কংক্রিট ঢালাই, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ কিছু কাজ বাকি আছে।

পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তর জেলা যশোর, বরিশাল, খুলনা, কুষ্টিয়ার যাতায়াতের সময় কমপক্ষে তিন ঘণ্টা কমে আসবে। মাওয়া-জাজিরায় ফেরিতে করে পদ্মা পাড়ি দিতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। আর ঘন কুয়াশা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে ২৪ ঘণ্টায়ও পদ্মাপাড়ে খোলা আকাশের নীচে বসে থাকতে হয়।

 সেতু চালু হলে একদিকে যেমন সময় বা ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি যাত্রার ব্যয়ও সাশ্রয় হবে। সমস্যা হলো, ঘাটে গিয়েই ফেরিতে ওঠার নিশ্চয়তা নেই। কখনো কখনো বাস দিন-রাত ঘাটে বসে থাকে ফেরিতে উঠতে। পদ্মায় শেষ স্প্যানটি স্থাপনের পর স্বপ্নের সেতুটি সামনে থেকে দেখতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এবং মাদারীপুরের জাজিরায় পদ্মাপাড়ে ভিড় করছেন।

পদ্মা সেতু কাছ থেকে দেখে, ছবি তুলে আনন্দে ভেসেছেন তাঁরা। পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়ায় বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) লৌহজংয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়।

পদ্মায় সেতুর অভাবে সময় মতো চিকিৎসা নিতে না পেরে কত মানুষকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে পদ্মাসেতু নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার জলিপাড়ের বিভূতি তালুকদারের চেহারায় স্বপ্ন, প্রত্যয় আর সাহসের আভা ছড়িয়ে পড়ল। স্বস্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে আগে যেখানে ৮-১০ ঘণ্টা লাগত, পদ্মা সেতুর কারণে সেই পথ পাড়ি দেওয়া যাবে মাত্র দুই ঘণ্টায়।

এটা কোটি মানুষের জীবন পাল্টে দেবে। পদ্মা সেতু দেখতে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের পাশে মাওয়া মৎস্য আড়তঘাটে দর্শনার্থীদের ভিড় জমেছে। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে করে যাচ্ছেন। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন স্বপ্নের সেতুটি একনজর দেখতে।

এ সময় অনেকেই সেতু পেছনে রেখে সেলফি তোলেন।কেউ আবার শুধুই পদ্মা সেতু ক্যামেরাবন্দী করছিলেন। নৌকা ও স্পিডবোটে করে পদ্মা সেতুর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তেও যেতে দেখা গেছে অনেক দর্শনার্থীকে। ঢাকার দোহারের নবাবগঞ্জ থেকে বাইসাইকেলে ৯ সদস্যের শিক্ষার্থীর একটি দল ৪৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে গিয়েছেন মাওয়া ঘাটে।

নদীর পাড়ে ঘুরে ঘুরে তারা সেতু দেখেছেন, ছবি তুলেছেন। এ দলের কামরুল ইসলাম বলেন, বিজয়ের মাসে এমন বিজয় আমাদের উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত করেছে। ইতু সরকার এসেছেন পদ্মাসেতু দেখতে। বাবার বাড়ি মাদারীপুরে। থাকেন ঢাকার কেরানীগঞ্জ শ্বশুরবাড়িতে। মুচকি হেসে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন পর এ সেতু দিয়েই বাড়ি যাব।’

এস এস