ন্যাভিগেশন মেনু

জীবননগরে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে মৎস্যজীবীদের মানববন্ধন


চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলায় বেনীপুর বাঁওড়ের (জলমহাল) খাস আদায় বন্ধ ও আগামী ২৫ বছর নিজেদের অধীনে মাছচাষের অনুমতিসহ বিভিন্ন দাবিতে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করেছেন মৎস্যজীবীরা।

শনিবার (১০ জুলাই) বিকেলে মহেশপুর উপজেলার অংশে কুশুমপুর গ্রামের পাশে বাঁওড়ের তীরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন করেন মৎস্যজীবীরা। 

এর আগে বুধবার (৭ জুলাই) সকালে জীবননগর উপজেলার বেনীপুর বাঁওড়ের ধারে মানববন্ধন করেছিলেন তারা।

এ সময় বেনীপুর বাঁওড় পাড়ের পাঁচ গ্রামের ১১৫ জন সুফলভোগীসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। 

‘কাফনের কাপড় মাথায় পরে নেমেছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবো’ এ শ্লোগানে মানববন্ধনে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দেন তারা।

বেনীপুর বাঁওড় (জলমহাল) ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দীন মোহাম্মদ জানান, ১৯৮৪ সালের এপ্রিল মাসে ইউএনডিপি, ওপিএস ও ডানিডার যৌথ পরিচালনায় আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এরপর ১৯৮৯ সালের ২০ জুন বেনীপুর বাঁওড় ইফাদচালিত প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

ইফাদ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বেনীপুর বাঁওড়ের তীরবর্তী ধান্যখোলা, বেনীপুর, কুশুমপুর, স্বরূপপুর ও পেপুলবাড়িয়া গ্রামের ১১৫ মৎস্যজীবী ৫০ বছরের জন্য বাঁওড়টি ইজারা নেন।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রতি ১০ বছর পর পর ইজারা নবায়ন করা হবে। এরপর থেকে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, বাঁওড়ের ইজারার সময় বাড়ানো হতে থাকে। কিন্তু চলতি বছরের ৬ জুন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মনিরা পারভিন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বেনীপুর বাঁওড় থেকে খাস আদায় ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেন।

জীবননগর উপজেলা জলমহাল খাস আদায় কমিটি সূত্রে জানা যায়, বেনীপুর বাঁওড় ইফাদ প্রকল্পের আওতায় বাংলা ২০৪৬ সন পর্যন্ত ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ইফাদ প্রকল্প বর্তমানে চলমান না থাকায় ভূমি মন্ত্রণালয় জলমহালটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। পরে গত ৯ জুন জীবননগর উপজেলা জলমহাল খাস আদায় কমিটি বাঁওড়টি এক মাসের জন্য বেনীপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অনুকূলে ইজারা দেন।

বেনীপুর বাঁওড়ের সুবিধাভোগী আব্দুর রব জানান, ৩৪৭ বিঘা জলকরের বেনীপুর বাঁওড়টি ইফাদ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে ৫০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। ১১৫টি সুবিধাভোগী পরিবারের প্রায় ৭০০ সদস্যের রুটিরুজি হতো এ বাঁওড়ে মাছচাষ করে। বেনীপুর বাঁওড় ছাড়া আমাদের আয়ের অন্য কোনো উৎস নেই। এরইমধ্যে আমরা ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২৫ লাখ টাকার মাছের রেণু বাঁওড়ে ছেড়েছি এবং অর্ধকোটি টাকার খাবার দিয়েছি। এখন যদি এ বাঁওড়ের মাছ ভোগ করতে না পারি, তাহলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নেই।

সুবিধাভোগী শাহাজান আলী বলেন, জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে মাছ চাষ। বাঁওড়ে বিলুপ্তপ্রায় দেশিয় মাছ চাষসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করি। উৎপাদিত মাছ স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়, যা এলাকার ও দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

সুবিধাভোগী রেনু বালা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সরকার আমাদের বাঁওড় দিয়েছিল মাছচাষ করার জন্য। মাছচাষ করেই সংসার চলে। ৫০ বছরের ভেতর ২৫ বছর চাষ করেছি ও সামনে আরও ২৫ বছর বাঁওড়ে মাছ চাষের অনুমোদন রয়েছে। এরই মধ্যে অন্যরা বাঁওড় এক মাসের জন্য ইজারা নিয়ে বাঁওড়ের সব মাছ লুট করে নিয়ে গেছে।

সুবিধাভোগী আলেয়া খাতুন বলেন, আমার স্বামী প্রতিবন্ধী। সন্তান নিয়ে দুরবস্থায় রয়েছি। বাঁওড়ে কোনো রকম মাছচাষ করে খেতাম। বাঁওড় না থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। এছাড়া ঋণের টাকা শোধ করারও কোনো উপায় নেই।

সুবিধাভোগী রমজান আলী বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাঁওড় দখলে নিচ্ছে এলাকার প্রভাবশালীরা। সমস্যা সমাধানে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, যেহেতু ইফাদ প্রকল্প চলমান নেই, সেহেতু ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ধরে নেওয়া হবে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, প্রকল্প চলমান না থাকায় জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ অনুসারে ওই বাঁওড় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যায়। এরপর বেশি রাজস্ব আদায়ের জন্য বাঁওড়টি নতুন করে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

এস কে/ এস এ/এডিবি/