ন্যাভিগেশন মেনু

টিকার দাম প্রকাশ করায় চিন দাম বাড়িয়ে দিল


চিন বাংলাদেশের কাছে সিনোফার্মের  টিকা বিক্রির সময় শর্ত জুড়ে দিয়েছিল দামটা গোপন রাখতে হবে।  কিন্তু দামটা কোনভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ায় চিন এখন টিকার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

চিনের টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ’ বা সিনোফার্ম থেকে বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের দেড় কোটি টিকা কেনার চুক্তি করে। প্রথম দফায় জুন মাসে সিনোফার্মের ৫০ লক্ষ টিকা বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে তিন মাসে সিনোফার্মের কাছ থেকে দেড় কোটি টিকা কিনতে দুই পক্ষ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। সিনোফার্ম থেকে টিকা কেনার বিষয়টি ১৯ মে অনুষ্ঠিত অর্থনীতি বিষয়ক

এর আগে ভারতের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা আমদানি করা নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল বাংলাদেশ। তবে দেশের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আর প্রত্যাশামতো পর্যাপ্ত টিকা রপ্তানি করেনি নয়াদিল্লি। ভারতের টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা সেরাম ইন্সটিটিউট যথাসময়ে বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি করতে না পারায় রাশিয়া ও চিনের টিকা আনার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।

ভারত থেকে অক্সফোর্ড -অ্যাস্ট্রাজেনেকার থেকে পাঁচ ডলারে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে বাংলাদেশ চুক্তি করে। সেই টিকা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের মাধ্যমে আসতেও শুরু করে। ভারত থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ২ লক্ষ ডোজ টিকা এসেছে। শুধু কেনা নয়, বাংলাদেশকে প্রায় ৩৩ লক্ষ ডোজ উপহার দিয়েছে ভারত। করোনা বেড়ে যাওয়ায় নিজেদের চাহিদা সামাল দিতে সম্প্রতি ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিন থেকে টিকা আনা নিয়ে আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ। টিকা পেতে বাংলাদেশ টিকাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভিকেও চিঠি দিয়েছে।

বাংলাদেশের কাছে বিক্রির জন্য সিনোফার্মের টিকার আগের দাম ধরা হয়েছিল ১০ ডলার।  কিন্তু দাম প্রকাশ পাওয়ায় চুক্তির বরখেলাপ করা হয়েছে। আর এর কারণ জানতে চেয়ে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছে চিন। বিষয়টি এত জটিল হয়ে পড়েছে যে সিনোফার্মের টিকা সরবরাহ নিয়েও নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

বিষয়টি এখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলেচনায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘চিনের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। কিন্তু অবস্থা খুব বাজে । আমরা ভবিষ্যতে এই দামে আর টিকা কিনতে পারব না। টিকার দাম প্রকাশ করে দেওয়ায় চিন ‘বিরক্ত’ বলে জানান আবদুল মোমেন।

এখন তারা অন্য দেশে যে দামে বিক্রি করে সেই দামে আমাদের কিনতে হবে। দ্বিগুণ, তিনগুণ দাম পড়বে। তবে এমন তরজার মধ্যেও স্বস্তি যে, বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ধাপে দেওয়া চিনের উপহারের আরও ৬ লাখ টিকা ১৩ জুনের মধ্যে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আজ শনিবার সকালে ঢাকায় চিনা দূতাবাসের উপ-প্রধান হুয়ালং ইয়ান ফেসবুক আইডিতে এ কথা জানান। এর আগে ১২ মে চিন থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসে।

অবশ্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চিঠি দিয়ে চিনকে জানিয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে এটি গণমাধ্যমে আসেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, চিন প্রতি ডোজ ১৪ ডলারে শ্রীলঙ্কার কাছে বিক্রি করেছে। ইন্দোনেশিয়ার কাছে বিক্রি করেছে ১৭ ডলারে। ওই দেশগুলো বাংলাদেশের কাছে কম দামে টিকা বিক্রির কথা জানতে পেরে টাকা ফেরত দিতে চিনকে চাপ দিচ্ছে। এজন্য চিন ১৫ ডলারের নীচে টিকা বিক্রি করবে না বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে। আমরা বলেছি, আমরা ইচ্ছা করে তথ্য প্রকাশ করিনি। আমরা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো জবাব পাইনি।’

বিশেষ করে শ্রীলঙ্কায় চিনা টিকার দাম নিয়ে প্রতিক্রিয়া শুরুর পর বিষয়টি সবার নজরে আসে। বিষয়টি শ্রীলঙ্কা আর চিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিতর্কের ঝড় আরো বড় হয়ে ওঠে বাংলাদেশেও। শুক্রবার দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চিনা রাষ্ট্রদূতের কাছে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছি। ভবিষ্যতে সরকার আর ওই দামে টিকা কিনতে পারবে না।

আব্দুল মোমেন বলেন, চিন অন্য দেশে যে দামে টিকা বিক্রি করে, সে দামেই এখন আমাদের কিনতে হবে। তা দ্বিগুণ বা তিন গুণও হতে পারে। গত ২৭ মে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে চিন থেকে সিনোফার্মের করোনা টিকার দেড় কোটি ডোজ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। সরকার এ টিকার প্রতি ডোজ ১০ ডলারে কিনতে যাচ্ছে বলে বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান যে ওই দাম এখনও অনুমোদন পায়নি।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে করোনাভাইরাসের টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। তবে দ্রুত বিষয়টির সমাধান বের করে বাংলাদেশ। টিকা পেতে দ্বারস্থ হয় চিনের। বাংলাদেশের প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গে রাজিও হয়ে যায় দেশটি। সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশকে দিতে সম্মত হয় চিন। গত ২৭ মে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ঘোষণা আসে- প্রতিডোজ ১০ ডলার করে চিন থেকে দেড় কোটি ডোজ সিনোফার্মের টিকা কিনবে বাংলাদেশ। করোনার টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে এই খবর  সাধারণ জনগণের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে।

এস এস