ন্যাভিগেশন মেনু

দিনাজপুরে ‘জয়বাংলা পল্লী’তে ঘর পাচ্ছেন ৪৭৬৬ ভূমিহীন


দিনাজপুরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া ৪ হাজার ৭৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর করা হবে। বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষপর্যায়ে।

শুক্রবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহহীনদের মাঝে এসব বাড়ি বুঝিয়ে দেবেন।

দিনাজপুরে গৃহহীনদের জন্য এসব পাকা বাড়ি নির্মিত পল্লীর নাম দেয়া হয়েছে ‘জয়বাংলা পল্লী’। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, যে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে একটি মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিলো, সেই স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে মানুষ গৃহহীন থাকবে, তা হয় না। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে দিনাজপুর জেলায় সেই স্লোগানের নামকরণে ‘জয়বাংলা পল্লী’তে ঠিকানা পাচ্ছে প্রায় পৌণে ৫ হাজার গৃহহীন পরিবার।

এতোদিন গৃহহীন থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে সৌন্দর্যমণ্ডিত নতুন পাকা ঘরে স্থায়ী ঠিকানা হতে যাচ্ছে, এটি নিশ্চিত হওয়ার পর আনন্দে উদ্বেলিত সুবিধাভোগী গৃহহীন পরিবারগুলো। 

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব জানান, সরকার এসব বাড়ি নির্মাণ করে দিলেও নিজের বাড়ির কাজ যাতে নিজেই ভালোভাবে বুঝে নিতে পারেন, সেজন্য আগেই মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে গৃহহীন পরিবারগুলোকে। এজন্য তারা নিজেই তদারকি করে নিজের বাড়ির কাজটি ভালোভাবে বুঝিয়ে নিচ্ছেন। এতে একদিকে তাদের বাড়ির প্রতি মালিকানা প্রতিষ্ঠা ও আন্তরিকতা বাড়ছে, অন্যদিকে কাজের মানও ভালো হচ্ছে।

 দিনাজপুরের বিরল উপজেলার শ্রীকুষ্ণপুর গ্রামের ৬৭ বছর বয়স্ক অভাবী মৃৎশিল্পী রম্বিকা চন্দ্র পাল বলেন, ‘সারাজীবন কাঁচা মাটি আগুনে পুড়ে হাঁড়ি-পাতিল বানিয়েছি, কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিনি কাঁচা মাটি পুড়ে ইটের তৈরি পাকা বাড়িতে থাকতে পারবো। দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর আর সহায়-সম্বলও নাই। সেই জন্য চিন্তা করা তো দূরের কথা এই বুড়ো বয়সে এসে পাকা বাড়িতে ঘুমোতে পারবো, সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি। কিন্তু সরকার এখন আমাদেরকে পাকা বাড়ি করে দিচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে জীবনটা স্বার্থক।’ 

মৃৎশিল্পী রম্বিকা চন্দ্র পালের অভাবের সংসারে সন্তান বলতে দুই মেয়ে। সহায়-সম্বল বিক্রি করে দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর এখন স্ত্রী নিয়ে থাকেন অন্যের জায়গায় ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে। সারাজীবন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে এখন বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। আর কোনো সন্তান না থাকায় দু-মুঠোর আহার জোগাতেই হিমসিম খেতে হয় তাকে। এই শেষ জীবনে বাড়ি বানানোর কথা কখনোই ভাবতে পারেননি তিনি। তাও আবার পাকা বাড়ি। এতোসবের মধ্যে শেষ জীবনে সরকারের দেয়া পাকা বাড়িতে ঠাঁই পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত তিনি। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে ‘জয়বাংলা পল্লী’তে তিনি পেয়েছেন একটি পাকা বাড়ি। 

একই পল্লীতে পাকা বাড়ি পাওয়া আক্তার বানু জানান, ২০ বছর আগে দিনমজুর শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর জমি না থাকায় মানুষের পুকুরপাড়ে ঝুপড়ি বানিয়ে আছেন। তাও আবার মাঝে মাঝে জোরে বাতাস এলে সব উড়িয়ে নিয়ে যায়। স্বামীর যা রোজগার তা পেট শান্ত করতেই চলে যায়। স্থায়ী ঠিকানার কথা ভাবতেই পারেননি। নিজের বাড়ি হবে, তাও আবার পাকা বাড়ি-এটি স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের দেওয়া এমন পাকা বাড়িতে ঠাঁই মিলবে। এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেই দুই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে তার।

শুধু রম্বিকা চন্দ্র দাস আর আক্তার বানু নয়, ভিন্ন ভিন্ন হলেও অনুরূপ প্রতিক্রিয়া দিনাজপুর জেলার প্রায় ৪ হাজার ৭৬৬টি গৃহহীন পরিবারের। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দিনাজপুরে পাকা বাড়ি পাচ্ছে এসব গৃহহীন পরিবার।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান, ‘‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুর জেলায় প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪ হাজার ৭৬৬টি বাড়ি। এসব পাকা বাড়ি নির্মিত গ্রামগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘জয়বাংলা ভিলেজ’। বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহহীনদের মাঝে এসব বাড়ি বুঝিয়ে দেবেন।’’

এডিবি/