ন্যাভিগেশন মেনু

বন্দর এলাকার নিরাপত্তায় ও অপরাধ দমনে কাজ করবে নৌ তদন্ত কেন্দ্র: আইজিপি


কর্ণফুলি নদীর ডাঙ্গারচর নৌ-তদন্ত কেন্দ্র চালুর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আসবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। 

তিনি বলেন, নৌ তদন্ত কেন্দ্র উদ্বোধন মাধ্যমে আমরা এটির কার্যক্রম শুরু করেছি। এতে এই এলাকা ও নৌ অঞ্চলের নিরাপত্তা আরো বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসন ও বন্দরের কাজে গতিশীলতা আসবে। 

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরের কর্ণফুলী থানার ডাঙ্গার চর নৌ-তদন্ত কেন্দ্র উদ্বোধন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এএসএম মাহাতাব উদ্দিন ও সিএমপির উপকমিশনার (এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এসএম মোস্তাইন হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাজস্ব বাজেটের আওতায় ২ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গর্নপূত অধিদপ্তরের মাধ্যমে ডাঙ্গার চর নৌ-তদন্ত কেন্দ্রে টাইপ-১ অনুযায়ী ৬ তলা ভিত বিশিষ্ট ২ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল কন্টিনেন্টাল কন্সট্রাকশন কোম্পানি।

আইজিপি বলেন, দেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমাদের ২ লাখ ১৩ হাজার সদস্যর বিশাল বাহিনী সরকারের বিধি-বিধান মেনে কাজ করছে। আমরা নিরাপত্তায় সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করি। প্রযুক্তিগত জ্ঞান পেশাগত কাজে লাগিয়ে আমাদের বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলায় সরকারকে সহায়তা করে যাচ্ছে।  তিনি বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি কাজ করছে। বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে পুলিশও কাজ করছে। এতে আইনানুগভাবে বিজিবি আমাদের কাছে সবধরনের সহযোগিতা পাবে।

পুলিশ হেফাজতে কোন ব্যক্তির মৃত্যু বিষয়ে আইজিপি বলেন, এমন ঘটনা সংঘটিত হলে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে মরদেহের সুরতহাল করা হয়ে থাকে। ডাক্তারের মতামত, পোস্টমর্টেম ও তদন্তের ভিত্তিতে যে তথ্য উঠে আসে সেটি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসব ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্দর আছে। সেজন্য বন্দর থানার পাশাপাশি বন্দর ডিভিশন আছে। শুধু বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তা নয়, বন্দর এলাকার নিরাপত্তার জন্য সিএমপির এই ইউনিটের সাথে  নৌ পুলিশের সমন্বয় থাকা দরকার। আমি মনে করি, নদীর নিরাপত্তার জন্য এই নৌ-তদন্ত কেন্দ্র ও নৌ-পুলিশ ফলপ্রসূভাবে কাজ করবে।

চট্টগ্রামে সম্প্রতি চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়া ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আইজিপি বলেন, আমাদের কেউ অপরাধ করলে তাকেও ছাড় দিচ্ছি না। এমনকি চুরি হওয়া স্বর্ণের ৭০ ভাগ আমরা উদ্ধার করেছি। পুলিশ আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে মানুষের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। তবুও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে তা সাথে সাথে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।  

উল্লেখ্য, কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু থেকে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত এলাকায় দস্যুতা, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে কাজ করবে সিএমপি। এই নৌ-তদন্ত কেন্দ্র তাদের আওতায় থাকা এলাকায় টহলসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মূল অপারেশনাল এলাকায় শাহ আমানত সেতু থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরে সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে চারটি নৌ-তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণে ২০০২ সালের ৯ জানুযারি সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চারটি নৌ-তদন্ত কেন্দ্র হলো ডাঙ্গার চর, চাক্তাই, রাঙ্গাদিয়া ও গুপ্তখাল নৌ-তদন্ত কেন্দ্র। চারটি নৌ-তদন্ত কেন্দ্রের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ডাঙ্গার চর ও চাক্তাই নৌ তদন্ত কেন্দ্রের জন্য ভূমি বরাদ্দ করে। রাঙ্গাদিয়া ও গুপ্তখাল নৌ-তদন্ত কেন্দ্রের ভূমি বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
 
প্রতিটি নৌ-তদন্ত কেন্দ্রে ২জন এসআই (নিরস্ত্র), ২ জন এএসআই (নিরস্ত্র), ২ জন এএসআই (সশস্ত্র), ৩০ জন কনস্টেবল, একজন বাবুর্চি ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ মোট ৩৮ জন করে মোট চারটি ফাঁড়িতে ১৫২ জনের জনবল কাঠামোও সৃষ্টি করা হয় ২০০৪ সালে। এরপর সিদ্ধান্তটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নৌ পুলিশ। 

২০২০ সালে সিএমপির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে পুনরায় তাগাদা দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘ ২২ বছর পর আলোর মুখ দেখছে সিএমপির আওতাধীন নৌ তদন্ত কেন্দ্র।