ন্যাভিগেশন মেনু

২ ডিসেম্বর

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সময়ের ব্যাপার মাত্র


ডিসেম্বর শুরুতেই শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, বিশ্ববাসী উপলব্ধি করতে থাকেন বাঙালীর স্বাধীনতা অর্জন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

মুক্তিযোদ্ধা আর ভারতীয় সেনাবাহিনী সমন্বয়ে গঠিত যেীথ বাহিনীর প্রবল আক্রমনে কোনঠাসা হয়ে পড়ে দখলদার পাকিস্তান সেনারা। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর দিনটি ছিল তাৎপর্যময়পূর্ণ। এদিনই বোঝা গিয়েছিল বাংলাদেশের হানাদার মুক্ত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

স্বাধীনতা অর্জনে উজ্জীবিত ছিল দামাল ছেলেরা। তাঁরা একের পর এক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটিতে সফল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল।  এই দিন মুক্তি সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি।

মুক্তিবাহিনীর  মারের চোটে কোনঠাসা তখন দখলদার বাহিনী। ধারাবাহিক বিজয় অব্যাহত রাখতে আরও নতুন স্থান দখল করতে থাকে মুক্তিবাহিনী। বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি সেনারা প্রবল চাপে পড়ে মনোবল হারিয়ে ফেলতে থাকে।

বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অসংখ্য মুক্তাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের দখলে নিয়ে নেয়।

কোম্পানি কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন আহমেদ, প্লাটুন কমান্ডার এমদাদুল হক ও নাজিম উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহের ধানশুর ও কাটালী গ্রামের বড় রাস্তায় পাক বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে ১৪ জন পাকসেনা ও ১৩ জন রাজাকার নিহত হয়।

মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ হানাদারকে হত্যা করে। বেশকিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। আখাউড়া, পঞ্চগড়, ভূরুঙ্গামারী, কমলাপুর, বনতারা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে হানাদার বাহিনী পিছু হটে যায়।

মুক্তিযোদ্ধারা দিনাজপুর জেলার পচাগড়ের ১০ মাইল দক্ষিণে বোদা থানা হেডকোয়ার্টার শত্রুমুক্ত করে এবং   ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়। রংপুর জেলার মুক্তিবাহিনী নাগেশ্বরী থানা শত্রুমুক্ত করে এবং আরও দক্ষিণে এগিয়ে যায়। কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনী জীবন নগরের উত্তর-পূর্বে আন্দুলবেড়িয়া গ্রাম স্বাধীন করে।

মুক্তিবাহিনীর ভারি চাপের কারণে শত্রুরা শক্তঘাটি ৯ম বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার যশোর থেকে মাগুরায় সরিয়ে নেয়।  ময়মনসিংহে মুক্তিবাহিনী কামালপুরে শত্রু পোস্ট চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে এবং শত্রুর সমস্ত যোগাযোগ লাইন ধ্বংস করেছে।

নাগরপুর থানা মুক্ত হওয়ার ফলে টাঙ্গাইলে আক্রমণ পরিচালনা অত্যাসন্ন হয়ে পড়ে। শত্রুপক্ষ বুঝতে পারে, মুক্তিযোদ্ধাদের আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। পরাজয় নিশ্চিত জেনে মরণকামড় দিতে শুরু করে দখলদার বাহিনী।

রাজধানী ঢাকায় গেরিলা যোদ্ধারা একের পর এক গুঁড়িয়ে দেয় দখলদারদের আস্তানা। পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে এই দিন ঢাকা থেকে বিবিসিতে সবিস্তারে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন সংবাদদাতা নিজামউদ্দিন আহমদ। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার পাঁচটি স্থানে বোমা বিস্ফোরণের খবর তিনি জানিয়েছিলেন।

এই দিন থেকে সীমান্ত-সংঘাত আরও তীব্র হয়ে ওঠে। পাকিস্তান অভিযোগ করেছিল যে, সাতটি স্থানে ভারত যুদ্ধের ফ্রন্ট খুলেছে এবং তাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহে আঘাত হেনেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের কর্মিসভায় বলেন, সময় বদলে গেছে, তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে বর্ণের প্রাধান্য দিয়ে তাদের (পাকিস্তান) ইচ্ছামতো হুকুমনামা জানাবেন, তা মেনে নেয়া যায় না।

তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেই লাখ লাখ বাঙালী স্বদেশে ফিরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করতে পারবে। 

এস এস