ন্যাভিগেশন মেনু

সাতক্ষীরায় চিকিৎসক সংকটে ২৩ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত


সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল জেলার মানুষের একমাত্র আশা-ভরসার জায়গা। কিন্তু ভরসার এই জায়গাটি এখন হতাশায় রূপান্তরিত হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার ২৩ লাখ মানুষ। এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত সার্জারি, চক্ষু, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়ারসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে বছরের পর বছর।

সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। রােগ নির্ণয়ের সব ধরনের মেশিন থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে মারাত্মক হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগের চিকিৎসককে দেখাতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

হাসাপাতালে জনবল সংকটে অবস্থা এমন নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শিশু ওয়ার্ড সামলাচ্ছেন একজন মেডিকেল অফিসার। অ্যানেসথেসিয়া দিচ্ছেন যে কোন মেডিকেল অফিসার। চোখের চিকিৎসা করছেন যখন যে চিকিৎসক (সাধারণ মেডিকেল অফিসার) দায়িত্বে থাকছেন তিনি। গাইনি রোগীরা হতাশ। কখনো কখনো উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারদেরও রোগী দেখতে দেখা যায়।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ২৭টি পদের মধ্যে  সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থ সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া) জুনিয়ার কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) রেডিওলজিস্ট, মেডিকেল অফিসার (জরুরি বিভাগ) মেডিকেল অফিসার (আয়ুঃ উন্নয়ন) পদে নেই কোনও চিকিৎসক।

এ ছাড়াও দ্বিতীয় শ্রেণির সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্টাফ নার্স, সহকারী নার্স-সহ বিভিন্ন পদে ২৪টি ও তৃতীয় শ্রেণির সহকারী নার্স, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ল্যাব), মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ডেন্টাল) পদে ৭টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ৩টি পদ দীর্ঘদিন যাবত শূন্য আছে।

হাসপাতালে হৃদরোগ রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট (সিসিইউ) থাকলেও নেই কোন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

সূত্র আরও জানায়, সামেক হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড করার পর সদর হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। সুচিকিৎসা তো দূরে থাক, চিকিৎসক সংকটের তীব্রতায় এতো রোগী সামলাতে প্রতিদিন হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরজমিনে দেখা গেছে, রোগীদের দীর্ঘ লাইন। সেবা নিতে আসা সবার মুখেই হতাশার ছাপ। যারা ডাক্তার দেখাতে পারছেন তারাও খুশি নন। কারণ যে রোগের চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন, সেই ডাক্তার নেই।

এমনই একজন আশাশুনি উপজেলার শোতকনা গ্রামের আলম। দীর্ঘদিন চোখের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তিনি। আলম বলেন, 'এসেছিলাম চোখের ডাক্তার দেখাতে। জানতে পারলাম চোখের কোনও ডাক্তার এই হাসপাতালে নেই। কোন উপায় না থাকায় সাধারণ মেডিকেল অফিসারকে দেখালাম।'

সদরের মাধবকাটি থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, 'আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা, সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখানোর জন্য। আসার পরে জানলাম হাসপাতালে কোন গাইনি ডাক্তার নেই। সিজার করানোর জন্য এখন আমাকে বাধ্য হয়ে করোনা সংক্রামনের ঝুকি নিয়ে, করোনা ডেডিকেটেড সামেক হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।'

জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শেখ ফয়সাল আহমেদ বলেন, 'বর্হিবিভাগের রোগী সামলাতেই রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের নেই সার্জারি, অর্থ সার্জারি, চোখের সিনিয়র কোন কনসালটেন্ট এমনকি গাইনি বিভাগেও সিনিয়র, জুনিয়র কোন কনসালটেন্ট নেই। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই।'

প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের পদটি শূন্য। তাই যখন যাকে পাই (মেডিকেল অফিসার) তাকে দিয়েই কাজ চালানো হয়। জনবল সংকটে কখনো কখনো উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়েও রোগী দেখাতে হচ্ছে। কোন উপায় নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'ইতোমধ্যে সদর হাসপাতালে ৬ হাজার ঘন লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন সেন্ট্রাল লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহের কাজ শেষ হয়েছে। হাই ফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। অনায়াসে ১০০ রোগীর অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। প্রয়োজনে করোনা রোগীদেরও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে।'

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন কাম তত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন সাফায়েত ১৬টি পদে চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'সদর হাসপাতালে জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চত করতে শূণ্য পদগুলোতে চিকিৎসকের প্রয়োজন।'

তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে সার্জারি, গাইনি ও চক্ষু সিনিয়র কনসালটেন্ট ভীষণ প্রয়োজন জানিয়ে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও ফোনে কথা বলেছি। বিষয়টি দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।'

ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবার দুর্দশা থেকে মুক্তি চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তোভোগী সাতক্ষীরাবাসী।

এমআরএফ/সিবি/এডিবি/