ন্যাভিগেশন মেনু

ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরলো ২৪২ প্রাণ


এবারের ঈদে যাতায়াত সীমিত হলেও সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪২ জন নিহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ২৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি।

রবিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী “ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২০” প্রকাশকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারও এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে। এতে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবছর গণপরিহন সীমিত আকারে চালু থাকায় ঈদযাত্রায় ব্যক্তিগত পরিবহন ও ছোট যানবাহনে যাতায়াত বেড়েছে। এ কারণেই ব্যক্তিগত পরিবহনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে।

এবারের ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ৪ আগস্ট, এইদিনে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ৮ আগস্ট, এইদিনে ৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এই সময় একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৪ আগস্ট, এইদিনে ৩২ জন নিহত হয় এবং একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় গত ৩১ জুলাই, এইদিনে ৫৫ জন আহত হয়।

এই সময়ে ৮৮ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৬ জন নিহত ৬৫ আহত হয়। এবছর মোট সংঘটিত ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনার ৮৮টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সাথে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটনা, যা মোট দুর্ঘটনার ৪৩.৭৮ শতাংশ। যেখানে মোট নিহতের ৪৩.০৮ শতাংশ এবং মোট আহতের ১৯.৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা ৫২.২৩ শতাংশ ঘটেছে। আগামী ঈদে এ দুটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ৯৬.০১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।

সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩২.৫৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯.৩৫ শতাংশ বাস, ১৯.৩৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১০ শতাংশ ব্যাটারিরিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৮.০৬ শতাংশ অটোরিকশা, ৭.৭৪ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ ও ২.৯০ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৪.৩৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫২.২৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৫.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায় ও ৭.৪৬ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২.৩৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৯.২৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৩.৪৩ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৯৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৯৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংঘটিত হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত হলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মতো ছোট দেশের সীমিত রাস্তায় ছোট যানবাহনের আমদানি জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ, নিয়ন্ত্রয়ক সংস্থা বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনকে বিকশিত করা জরুরি। একইসাথে সড়ক দুর্ঘটনাকেও মহামারির মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

ওআ/