ন্যাভিগেশন মেনু

কাশিয়ানীতে রাস্তায় দেয়াল তোলায় অবরুদ্ধ ৫ পরিবার


গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের ফলসি গ্রামে দেয়াল তুলে পাঁচটি পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। বিকল্প কোনও রাস্তা না থাকায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো গত এক সপ্তাহ যাবত বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। 

ফলে ওইসব পরিবারের বয়স্ক, অন্তসত্ত্বা নারী ও শিশুরা পড়েছে চরম বিপাকে। নৌকায় করে আধা কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তাদের হাট-বাজার ও চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে।

সম্প্রতি ওইসব পরিবারের পক্ষে ভুক্তভোগী লাল্টু সরদার (৪৮) পথাধিকার ফিরে পেতে ও মানবিক বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের জন্য গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযোগে লাল্টু সরদার বলেন, 'রাস্তাটি দুইশ’ বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। আমরা এখানে বাড়ি করার পর বিনা বাধায় ৩২ বছর রাস্তাটি ব্যবহার করছি। প্রতিপক্ষ ফলসি গ্রামের আসলাম শেখ, লাড্ডু শেখ ও হাসান শেখ স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তটি ইটের দেয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এখন নিরুপায় হয়ে পড়েছি। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না।'

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় সরেজমিনে ফলসি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তালতালা-ফলসি সড়কের দক্ষিণ পাশে লালটু সরদারে বাড়ি। এলাকার লোক এটিকে পাল বাড়ি নামে জানে। ১৯৯০ সালে সরদার ও শেখ বংশ ওই বাড়ি কিনে নেয়। সেই থেকে বসবাস করে আসছে ওই দুই বংশ।

বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, ওই রাস্তা থেকে বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়ির মধ্যে সরদার বংশের পাঁচটি পরিবার। উত্তর পাশে আসলাম শেখ ইটের দেয়াল তুলেছেন তার পাশে লাড্ডু শেখ টিন দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। পূর্ব পাশে ইটের প্রাচীর তুলছে। উত্তর ও পূর্ব পাশ দিয়ে প্রাচীর তুলে হাঁটার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে পানি থাকায় যাতায়াতের কোনও ব্যবস্থা নেই।

কয়েকদিন যাবত অবরুদ্ধবস্থায় আছে ওই পরিবারগুলোর ৩৫ থেকে ৪০ জন সদস্য। বাড়িতে ৬ জন শিক্ষার্থী ও একজন অন্তসত্ত্বা এবং বৃদ্ধ রয়েছেন। করোনাকালীন দীর্ঘ সময় পর বিদ্যালয় খুললেও শিক্ষার্থীরা যেতে পারছেনা।

ওই বাড়ির ফুল জান বেগম (৭৫) বলেন, 'সাতদিন ধরে আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। আগে এ বাড়ি ও বাড়ি গিয়ে সময় কাটাতাম। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় বাড়ির মধ্যে বসে থাকতে হচ্ছে। আমার নাতি রুপা বেগম (২২) সাড়ে ৭ মাসের অন্তসত্ত্বা। যে কোনও সময় সন্তান প্রসবের জন্য তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হতে পারে। তাই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।' 

তিনি বলেন, আমাদের পাঁচটি পরিবারে সব লোকজন বন্দি অবস্থায় রয়েছে। আমরা এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসানের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে প্রতিপক্ষ আসলাম শেখের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। 

এ বিষয়ে কথা হয় লাড্ডু শেখের সাথে। তিনি বলেন, 'বিগত ৩২ বছর আমরা তাদের চলাফেরায় বাধা দেইনি। এক সপ্তাহ আগে আমাদের সাথে লাল্টু সরদারদের ঝগড়া-বিবাদ হয় তাই আমরা পথ বন্ধ করে দিয়েছি।' 

কাশিয়ানীর নিজামকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল খান বলেন, চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে পাঁচটি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা একটি অমানবিক ব্যপার। এর আগে বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একসাথে বসেছিলেন। কিন্তু তারা সমাধান করতে পারেননি। কাশিয়ানী নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিষয়টি আমরা দ্রুত সমাধান করবো।

কাশিয়ানীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে মীমাংসা করার জন্য বলেছি। তারা ব্যর্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এডিবি/