ন্যাভিগেশন মেনু

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কিংবদন্তী গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর


রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কিংবদন্তি গণসংগীত শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর।

শনিবার (২৪ জুলাই) বাদ যোহর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে খিলগাঁও মাটির মসজিদে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

এর আগে সকাল ১১ টায় খিলগাঁও পল্লিমা সংসদ মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর খিলগাঁও মাটির মসজিদে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর তাকে তালতলা কবরাস্থানে সমাহিত করা হয়।

এর আগে শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাত ১০টা ৫৬মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় ফকির আলমগীরের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে ফকির আলমগীরের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে রেখে গেছেন।

ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় দিনটিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির ও মা বেগম হাবিবুন্নেসা।

তিনি কালামৃধা গোবিন্দ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাশ করেন।

তিনি ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। গণঅভ্যুথান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০-এর সামরিক শাসনবিরোধী গণআন্দোলনে তিনি শামিল হয়েছিলেন তার গান দিয়ে।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার গাওয়া ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’,  ‘বনমালী তুমি’ ‘ কালো কালো মানুষের দেশে’, মায়ের একধার দুধের দাম’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’সহ বেশ   কিছু গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। 

এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। 

তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি, জনসংযোগ সমিতির সদস্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পর্যন্ত পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় ‘একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্‌দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযোগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা’, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’।

ওআ/