ন্যাভিগেশন মেনু

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মহাজোট প্রার্থীর হ্যাট্রিক পরাজয়ের কারণ


তৃনমুলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে অযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার কারনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে পরপর তিন বার (২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারীর উপ-নির্বাচনে) মহাজোট প্রার্থীদের পরাজয় হয়েছে। 

জানাগেছে, ২০১৪ সালে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ পান ৩৭,৬৭৩ ভোট, ২০১৮ সালে মহাজোট প্রার্থী ওয়ার্কাস পার্টি নেতা মোঃ ইয়াসিন আলী পান ৩৮,০৬২ ভোট। আর চলতি ২০২৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী ওয়ার্কাস পার্টির মোঃ ইয়াসিন আলী পান মাত্র ১১,৩৫৬ ভোট। তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

গত ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৩ইং সনে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ১৪ দলীয় জোট, তথা মহাজোটের মনোনয়ন পান ওয়ার্কাস পার্টির মোঃ ইয়াসিন আলী। তিনি ওয়ার্কাস পার্টির দলীয় প্রতীক হাতুড়ি মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের প্রধান সরিকদল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কোন দলীয় প্রার্থী দেয়নি। যদিও আসনটি আওয়ামীলীগের অন্যতম ঘাটি।

তাই এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে অধিকাংশ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসছেন। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রার্থী মোঃ ইমদাদুল হক বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার যথেষ্ট উন্নয়ন কাজ করেন। 

২০০১ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সারাদেশে মাত্র ৬২টি আসন পায়। এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটিও মাত্র ১০,৪৭০ ভোটের ব্যবধানে হাতছাড়া হয়ে যায়। ওই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইমদাদুল হক পান ৭৮,৯৯৮ ভোট।

এরপর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় মহাজোট গঠিত হয় এবং নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মহাজোট সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ঘাটি হিসাবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটি মহাজোটের সরিকদল জাতীয় পার্টিকে দেয়া হয়। দল তথা জোটের বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামীলীগের ওই আসনের নেতা-কর্মীরা দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। ওই আসনের আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক এমপি  মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইমদাদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সকল স্তরের নেতা কর্মী ও ভোটাররা স্বতঃস্ফুর্তভাবে একজোট হয়ে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে এমপি নির্বাচিত করেন। কিন্তু ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে যখন মহাজোটের মনোনয়ন দেয়া হয় তখন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা শীর্ষ নেতৃত্বের এ সিদ্ধান্তে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হয়ে মহাজোটের প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে বর্জন করে। বিকল্প হিসাবে ওয়ার্কাস পার্টির নেতা জনৈক কলেজ শিক্ষক মোঃ ইয়াসিন আলীকে এমপি নির্বাচিত করেন।

কিন্তু ২০১৮ সালে মোঃ ইয়াসিন আলী যখন মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে আবারো নির্বাচনে অবর্তীন  হন। তখন আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের সমর্থন নিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইমদাদুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রার্থী হন । মোঃ ইমদাদুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ৮৪,৩৯৫ ভোট পান। আর মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা মোঃ ইয়াসিন আলী নৌকা প্রতীক নিয়ে মাত্র ৩৮,০৬২ ভোট পান। মাঝখান দিয়ে বিএনপির প্রার্থী মোঃ জাহিদুর রহমান ৮৮,৫১০ ভোট পেয়ে মাত্র ৪,১১৫ ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে মোঃ জাহিদুর রহমান দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেন, তখন আবারও ওয়ার্কাস পার্টির উক্ত মোঃ ইয়াসিন আলী ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়ে তাদের দলীয় প্রতীক 'হাতুড়ি' মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অবতীর্ণ হন। এবার শীর্ষ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের বঞ্চিত স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা চরম হতাশ ও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলে তাদের হতাশ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়েও ওয়ার্কাস পার্টির মোঃ ইয়াসিন আলী মোট ৩,২৪, ৭৪১ ভোটের মধ্যে মাত্র ১১,৩৫৬ ভোট পান এবং জামানত হারান। বিকল্প হিসাবে ওই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ভোটাররা জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে এমপি নির্বাচিত করেন। যদিও এই আসেন জাতীয় পার্টির ভোটের সংখ্যা ৩০  থেকে ৪০ হাজার, কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ আওয়ামলীগের হতাশ ও বিক্ষুব্ধ ভোটারদের ভোটে ৮৪,০৪৭ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন।

১৯৯১ইং সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিবাচনের পর্যলোচনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ আওয়মীলীগ একক ভাবে মাত্র ২ বার (১৯৯১ ও ১৯৯৬) নির্বাচনে অংশ নেয়  এবং ২ বারই বিজয় লাভ করে।  জাতীয়পার্টি একক ভাবে ৪ বার (১৯৯১, -১৯৯৬,২০১৪,২০১৮ইং) নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ৪ বারই পরাজিত হয়। ২০২৩ সালে আওয়ামীলীগের হতাশ ও বিক্ষুদ্ধ ভোটারদের ভোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয় লাভ করে। ওয়াকার্স পার্টি একক ভাবে ১ বার (২০০১ইং সালে) নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে এবং মাত্র ৪,০৬০ ভোট পায় এবং জামানত হারান। ২০১৪ইং সালে আওয়ামীলীগের হতাশ ও বিক্ষুদ্ধ ভোটারদের ভোটে ওয়াকার্স পার্টির প্রার্থী বিজয় লাভ করে। ১৪ দলীয় মহাজোট ৪ বার (২০০৮, ২০১৪, ২০১৮, এবং ২০২৩ইং সাল) নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে এবং মাত্র ১ বার বিজয় লাভ করে (২০০৮ সালে আওয়ামলীগের ভোটারদের ভোটে) এবং ৩ বার পরাজিত হয় (২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৩ইং সালে)।

জানাগেছে, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মো: ইমদাদুল হকই আওয়ামীলীগ তথা ১৪ দলীয় মহাজোটের সব থেকে জনপ্রিয় প্রার্থী।