ন্যাভিগেশন মেনু

দিনাজপুর শহরে গিজগিজ করছে মানুষ, বেড়েছে মৌসুমী ভিক্ষুক


দিনাজপুর শহরে করোনা রোধে চলমান লকডাউনেও দোকানপাট ও শপিংমল খোলা থাকায় ঈদকে ঘিরে শহরে মানুষের ভিড় বেড়েছে। তার ওপর করোনাকালে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ব্যবসায়িক শহর দিনাজপুরে ঢুকছে কর্মহীন হয়েপড়া নানা পেশার মানুষ।

শহরের প্রধান সড়ক ছাড়াও অলিগলিতেও প্রবেশ করা দায় হয়ে পড়েছে যানজটের কারণে। ভিড় সামলাতে অনেকটাই নাজেহাল হতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীদের।

করোনার কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা হোঁচট খেয়েছে। ভারী হয়েছে লোকসানের বোঝা। কেউ কেউ প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে হয়েছে নিঃস্ব। অসংখ্য মানুষ হারিয়েছে রুটি রোজগারের পথ। চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরেছেন লাখো মানুষ। 

এমন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে অনেকেই। কেউবা আবার কোনো উপায় না পেয়ে পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন একটু সাহায্যের আশায়। এটা কারো জন্য ভিক্ষাবৃত্তি, আর কারো কারো বাঁচার লড়াই। অলিগলি সবখানেই দেখা মিলছে নতুন নতুন মুখ। যাদের বেশিরভাগই মৌসুমী ভিক্ষুক।

শুক্রবার (৭ মে) সকালে দিনাজপুরের বিভিন্ন অলিগলির মোড়ে, কাঁচা বাজার, ওষুধের দোকান, চায়ের দোকান, বিপণী বিতান, যানজটের সড়ক, সদর হাসপাতাল, স্টেশন রোড, বাহাদুর বাজার, লিলিমোড়, লুৎফুনেচ্ছা টাওয়ার, মর্ডাণ মোড়, মালদহপট্টি, কাচারিবাজার, বাস ও ট্রাক টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনে দেখতে পাওয়া যায় অসংখ্য মৌসুমি ভিক্ষুক। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। আবার অনেকে ঘুরছে দলবদ্ধ হয়ে। লক্ষ্য একটাই-জীবন বাঁচাতে সাহায্য পাওয়া।

পুরাতন বাহাদুর বাজার মোড়ে চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন হাতে দাঁড়িয়ে দুলালী বেগম। মাস্ক না থাকলেও মুখে শাড়ির আঁচল। সামনে দিয়ে কেউ যেতে না যেতেই হাত বাড়িয়ে চাইছেন সাহায্য। কথা হলে তিনি জানান, তার স্বামী রিকশাচালক। আর তিনি অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। কিন্তু করোনার কারণে তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বাড়ির মালিক। চলমান লকডাউনে স্বামীর আয়ও অর্ধেকে নেমেছে। তারওপর তিনি হঠাৎ অসুস্থ্য হওয়াতে সংসার চলছে না। চিকিৎসার টাকাও জোগাড় করতে পারছেন না। তাই মানুষের কাছে সাহায্য চাইছেন।

শহরের সদর হাসপাতাল, স্টেশন রোড, বাহাদুর বাজার, লিলিমোড়, লুৎফুনেচ্ছা টাওয়ার, মর্ডাণ মোড়, মালদহপট্টি এলাকায় বেশ কয়েকটি স্পটে বিভিন্ন বয়সী এমন অসংখ্য নারী ও পুরুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এদের কেউ গৃহশ্রমিক, কেউ হোটেলে রাঁধুনীর কাজ করেছেন। কেউ কেউ ঢাকার ফুটপাতে চা বিক্রি করতেন। করোনায় লকডাউনে কাজ হারিয়ে অসহায়ত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে পথে নেমেছেন তারা। অন্যের কাছে দান বা ভিক্ষার জন্য হাত বাড়িয়ে দেওয়া এসব মানুষ পেটের জ্বালায় ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। 

নাম না প্রকাশের শর্তে লিলিমোড় এলাকায় পঞ্চাশোর্ধ এক ভিক্ষুক কিছুটা হতাশাচ্ছন্ন মুখে জানান, তিনি ঢাকায় দোকানে কাজ করতেন। করোনার সময়ে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। চাকরি হারিয়ে অনেক জায়গায় কাজের সন্ধান করেছেন। কিন্তু কাজ না পাওয়ায় প্রতিদিন দিনাজপুর শহরে এসে লোক বুঝে হাত বাড়িয়ে দেন বিভিন্ন অযুহাত নিয়ে। অন্যের অনুভুতিতে নাড়া দিয়ে চেয়ে বসেন সাহায্য। এভাবেই একমাস ধরে চলছেন তিনি। তবে একই এলাকায় একদিনের বেশি যান না বলেও জানান ওই ব্যক্তি।

কেনাকাটাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে আসা কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এমনটি আগে কখনো দেখা যায়নি। যেখানেই দাঁড়াবেন, চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরছেন চার থেকে পাঁচজন।’ 

ঈদকে ঘিরে বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনায় কর্মহীন লোকজন সাহায্যের আশায় এসেছেন দিনাজপুর শহরে। তাদের দলবদ্ধ চলাফেরার কারণেই এবারে যানজট বেশি হচ্ছে বলেও জানান তারা। তবে বেশির ভাগ দোকানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মুখে মাক্স নেই এবং হ্যান্ড সিনিটাইজারও অনেক দোকানে দেখা মেলেনি। 

এএস/এডিবি/