ন্যাভিগেশন মেনু

এ বিজয় আমার নয়, জনগণের বিজয়: শেখ হাসিনা


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবার বিজয়ী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।

সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে গণভবনে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। এই বিজয় জনগণের বিজয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আটবার নির্বাচন করেছি।‌ এবার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনটা যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি। আপনাদের (বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক) আগমনের কারণে আমাদের দেশের গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার আরও সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের কথা বলবেন। আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর। আবহাওয়াও অনেক ভালো। আপনাদের আগমন আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করবে, শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার চলার পথটা এত সহজ ছিল না, অনেকবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আমি মুখোমুখি মৃত্যুকে দেখি, কখনও গুলি, কখনও বোমা হামলা, কখনও গাড়িতে হামলা। আমি যখন শান্তি র‌্যালি করছিলাম তখন গ্রেনেড হামলা করা হয়। আমার দলের নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষা করে মানবঢাল রচনা করে। অনেকে জীবন দেয়। জনগণের কথা বলতে গিয়ে অনেকবার গ্রেপ্তার হয়েছি, বন্দি হয়েছি। তারপরও আমি দমে যাইনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষ যেন উন্নত জীবনের অধিকারী হতে পারে। আমরা সরকারে এসে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছোট বোন শেখ রেহানা আর আমি বেঁচে যাই। ছয় বছর আমরা রিফিউজি ছিলাম। খুব কষ্টকর জীবন ছিল। 

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে যারা নারী ধর্ষণ করেছিল, লুটপাট করেছিল,অগ্নিসংযোগ করেছিল, স্বাধীনতার পরপর তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। কিন্তু মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় এসে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসায়। যখন আমার মা-বাবার খুনিরা এবং যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়, ওই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি। আমার আসার একটাই লক্ষ্য ছিল- বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা; মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা; গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আর্থসমাজিক উন্নতি করা।
 

এ সময় দেশি বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা। আমি অনেকবারই নির্বাচন করেছি। সেই ১৯৮৬ সাল থেকে আটবারই আমার নির্বাচন করা হয়ে গেছে। তবে এত মানুষের আগ্রহ আগে দেখিনি।

২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় এটাই চেষ্টা ছিল নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করা, মানুষের যে ভোটের অধিকারটা সেটা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ মানুষ যাতে তার পছন্দের প্রার্থীকে বেচে নিতে পারে সে জন্য নির্বাচনের সিস্টেমকে সংস্কার করেছি।

তিনি বলেন, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সকলেই নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ থেকে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করেছে। এবারের নির্বাচনটা আরেকটু ব্যতিক্রমী। সাধারণত আমরা দলকে প্রার্থী ঠিক করে বা সব দলগুলো তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে দেয়। এবার আমরা আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছি, পাশাপাশি এ নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যে যার ইচ্ছামতো দাঁড়াতে পারবে। আপনারা দেখেছেন একটি দল হয়ত অংশগ্রহণ করেনি। কারণ তারা কখনোই নির্বাচন করতে চায় না। সে দল মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি। ফলে তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সেই জন্য নির্বাচনকে ভয় পায়।

তিনি বলেন, আমাদের দল জনগণের দল, এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদলগুলোরও বেশকিছু নির্বাচিত হয়েছেন। এ দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বিজয়টা হচ্ছে জনগণের বিজয়। এ বিজয়টা আমার বিজয় নয়। আমি মনে করি জনগণের বিজয়। কারণ এখানে জনগণের যে অধিকার আছে, সরকার গঠন করার ক্ষমতা আছে তাদের হাতে। যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি; জনগণের ভোটের অধিকার, সেটা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সম্পূর্ণ ফলাফল আসলে গেজেট হবে তখনই শপথ হবে। এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবে সেটা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সেটা নির্বাচিত করবেন। মেজরটি পার্টি যাকে নির্বাচিত করবেন তিনিই হবেন সংসদীয় দলের নেতা, তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে, সরকার গঠন হবে। এটাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, সেই অনুযায়ী করতে চাচ্ছি।