ন্যাভিগেশন মেনু

বাংলাদেশের উন্নয়নে উচ্ছসিত প্রশংসা এডিবির


উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বলে জানিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক- এডিবি। বিশেষ করে ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এডিবি আশাবাদী যে, আরও ভাল করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।  

 রাজধানী ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে রবিবার  এডিবি আয়োজিত ‘দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন সপ্তাহ ২০১৯’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে। প্রথমবারের মতো এডিবি ‘দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন সপ্তাহ ২০১৯ : ডেলিভারিং ফাস্টার, বেটার, স্ট্রংগার ডেভেলপমেন্ট আউটকামস’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন করেছে।

এডিবিকে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান  অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী  মোঃ তাজুল ইসলাম ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়শী প্রশংসা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ। এডিবির অর্থায়নে বাস্তবায়ন হওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এডিবির নতুন নীতিমালার বিষয়ে দিনব্যাপী বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলের সেশনে যোগ দেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

সকালে উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, বিদেশী সংস্থা কিংবা কোন রাষ্ট্র বিনিয়োগ করলে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুন্দর অতীত রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের জনবল রয়েছে। রয়েছে ভূমিও। আমাদের এখন বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিনিয়োগকারী লাভবান হবে, দেশও লাভবান হবে। এডিবি বিনিয়োগ করলে আমাদের পাশাপাশি তারাও লাভবান হবে।

মন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতা রাখতে সঠিক প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে। যাতে করে তারা তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিতে পারে। যখন কোন একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তখন এটির যথাসময়ে বাস্তবায়ন, মান ঠিক রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। মান সম্পন্ন পরিকল্পনা ও নক্সা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে প্রকল্পের খরচ কমানোও অপরিহার্য।

কাজের মান বজায় রাখা প্রসঙ্গে দুর্নীতির বিষয়েও কথা বলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশে দুর্নীতি আরেকটি বড় সমস্যা। আপনারা জানেন, দেশ সবসময় গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে অরাজক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে আমাদের সমাজে।

এজন্য  প্রায় জায়গায় সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে, দুর্নীতি রয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুর্নীতি রোখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ এক সময় নানা সঙ্কটময় ছিল। ক্ষুধা দারিদ্র্য এদেশে অন্যতম সমস্যা ছিল। আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাদ্য সঙ্কট দূরই হয়নি শুধু আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা বিদ্যুত সেক্টরেও এগিয়ে গেছি। ফলে অনেক জায়গায় শিল্পায়ন হচ্ছে মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে আজ পদ্মাসেতু করছি। এডিবি সব সময় আমাদের সাপোর্ট দেয় ভবিষ্যতেও সেটি অব্যাহত থাকবে প্রত্যাশা করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী।

তাজুল ইসলাম বলেন, নিয়মিতই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ আসে প্রকল্প পরিচালকদের বিরুদ্ধে। আশাকরি, প্রকল্প পরিচালকরা আরও বেশি যত্নশীল হবেন। যখন কোন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তার উচিত সেই প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা, কাজের মানও ঠিক রাখতে হবে। তিনি যেন কোন সমালোচনার মুখে না পড়েন। অনেক সময় পকল্প পরিচালকদের দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। মন্ত্রী।

বাংলাদেশের সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ উল্লেখ করে মনমোহন প্রকাশ বলেন, ভারতের পূর্বাংশের প্রবেশপথ বাংলাদেশ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতি সংস্থার (আশিয়ান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশটি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা) প্রবেশপথ এবং চীন, ভুটান ও নেপালের দক্ষিণে প্রবেশপথও এই বাংলাদেশ। ভাল করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের এবং এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করব, কীভাবে এই সুযোগকে কাজে লাগানো যায়।

বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে এ সময় তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি করেছে। এই সময়ে গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশকে এখন প্রবৃদ্ধির মডেল হিসেবে দেখা হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। দেশটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হয়েছে।

২০৩০ সালের সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের পথে রয়েছে দেশটি। বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। পোশাকশিল্পে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় রফতানিকারক। তৃতীয় বৃহত্তম শাকসবজি উৎপাদক, চতুর্থ ধান উৎপাদক এবং বিশ্বে সপ্তম বৃহত্তম আম উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ।

অল্প যে কয়েকটি দেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জন করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। গত এক দশকে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে এখানে। প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষা ও নারী শিক্ষার হার বেশি। বর্তমানে ৯৮ শতাংশ মেয়ে শিশু প্রাথমিক শিক্ষা নিচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও তারা সফল। মানব উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভাল করেছে বাংলাদেশ।

মনমোহন বলেন, এডিবি ৪৬ বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। এডিবির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ বাংলাদেশে। বর্তমানে এডিবির দেয়া ঋণে বাংলাদেশে ৫৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান।

টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এডিবি বাংলাদেশের মূলত ছয়টি খাতকে সমর্থন করে- বিদ্যুত, পরিবহন, পানি এবং অন্যান্য নগর অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পল্লী উন্নয়নে অর্থায়ন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। এডিবি সমর্থিত কয়েকটি বড় প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে যমুনা সেতু, আশুগঞ্জ বিদু্যুতকেন্দ্র, ঢাকা ওয়াশা, খুলনা ওয়াসা, সড়ক ও রেলপথ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন বিবিধ।

আরো পড়ুনঃ

বাংলাদেশে ১০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত

বিকেলের সেশনে অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় স্পেনের রাষ্ট্রদূত আলবারো সালাস, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাইকা প্রধান হিতোশি হিরাতা।

বাংলাদেশের পাল্টে যাওয়া এবং কিভাবে উন্নয়ন করছে শেখ হাসিনা সরকার সে তথ্য তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে। গ্রামে শহুরের সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।

কৃষিমন্ত্রীও বলেন, একসময়ের দুর্ভিক্ষের দেশ এখন খাদ্যে উদ্বৃত্ত। সঠিক নেতৃত্বের কারণেই এটি হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন এসডিজি অর্জনে শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার এগিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাইকা প্রধান হিতোশি হিরাতাও বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অনেক দেশের কাছে বাংলাদেশ মডেলে পরিণত হয়েছে। এখানকার উন্নয়নে অভিভূত। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে বলেও আশা করেন হিতোশি।

একাধিক প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, তারা নতুন গাইডলাইন নিয়ে আলোচনা করছেন। কিভাবে প্রকল্প আরও দ্রুত হবে সেটি বলেছেন। সেই সঙ্গে অর্থছাড় নতুন গাইডলাইনে দ্রুত করা যাবে বলেও জানান একাধিক পিডি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব (এডিবি শাখার প্রধান) ফরিদা নাসরিনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

 এস এস