ন্যাভিগেশন মেনু

যশোরে ভারত ফেরত ৪ জনের দেহে মিললো করোনার ভারতীয় ধরণ


সব আশঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে দেশে মিললো করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। 

আজ শনিবার (৮ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। 

যশোরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীরা সদ্য ভারত থেকে ফিরেছেন। তারা চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন এবং বর্তমানে তারা যশোরে কোয়ারেন্টিনে আছেন।বিশ্বের অন্তত ১৭টি দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন পাওয়া গেছে। 

গেলো মাসের শেষের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে ভারতে সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে করোনা। আজও  একদিনে চার হাজার মৃত্যু দেখলো দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে প্রাণ হারিয়েছেন চার হাজার ১৮৭ জন।

একইসময়ে নতুন রোগী পাওয়া গেছে চার লাখ এক হাজার। অন্যদিকে, ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের একটি স্ট্রেনকে ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, এটি ‘উদ্বেগের রূপ’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

এটি অন্য স্ট্রেনগুলো থেকে আরো বেশি দ্রুত ছড়ায় বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর এই স্ট্রেনটি পিএইচই কর্তৃক বি১৬১৭.২ নামে পরিচিত। এ ছাড়া দেশজুড়ে ভাইরাসটির ৪৮টি ক্লাস্টার পাওয়া গেছে। যা মূলত ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদিও তুলনামূলকভাবে ক্ষেত্র কম রয়েছে।   

এমন অবস্থায় বর্তমানে স্ট্রেনটি নিয়ে উদ্বেগের মাঝেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোভিড-১৯ এর স্ট্রেনটি ভ্যাকসিনকে এড়িয়ে যেতে পারে এমন কোনো কারণ এখন অবধি তাদের চোখে পড়েনি। ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার তিনটি ধরনের মধ্যে এই স্ট্রেন একটি। 

এটি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়েছে এবং পিএইচই কর্তৃক এটির তদন্ত চলছে। কোভিড-১৯ এর বাকি দুটি ধরন হলো বি১৬১৭.১ ও বি১৬১৭.৩। বি১৬১৭.২ স্ট্রেনটি পুরো ইংল্যান্ড জুড়ে এখন অবধি ৫০০ এর অধিক শনাক্ত হয়েছে। 

সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে লন্ডন এবং দেশের উত্তর-পশ্চিমে। দেশের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগির জানান, রাজধানীর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া এক স্যাম্পল পরীক্ষা করে এই ধরন মিলেছে। করোনায় প্রতিবেশী ভারতের অবস্থা ভয়াবহ। মৃত্যু ও শনাক্তে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে প্রতিদিন। 

ভারতে এবারের পরিস্থিতির জন্য বিশেষভাবে দায়ী করা হচ্ছে কোভিডের 'ডাবল' বা 'ট্রিপল মিউটেশন' ভেরিয়েন্টকে। অত্যন্ত বিপজ্জনক এই ধরন বাংলাদেশে যাতে আসতে না পারে, সে জন্য সপ্তাহখানেক আগেই ভারতের সঙ্গে সীমান্ত দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। 

তবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে। আর আকাশপথে গত ১৪ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। 

গত ২৫ এপ্রিল রাতে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্ত মন্ত্রণালয় সভার  সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ৯ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্থলবন্দরগুলো দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ থাকবে। 

চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছে এবং ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম আছে- এমন বাংলাদেশি নাগরিকরা বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরতে পারবে। 

তবে তাদের অবশ্যই নয়াদিল্লি, কলকাতা বা আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনের অনুমতি এবং বাংলাদেশে প্রবেশের আগে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় 'কোভিড নেগেটিভ' সনদ থাকতে হবে। 

বাংলাদেশে প্রবেশের পর তাদের অবশ্যই দুই সপ্তাহ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ঢাকায় বিদেশ মন্ত্রক জানায়, ভারত থেকে পণ্যবাহী যানবাহন বাংলাদেশে প্রবেশের আগে সীমান্তে অবশ্যই পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 

চালক ও তাঁর সহকারীদের কঠোরভাবে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। স্থলসীমান্তগুলো বন্ধ থাকার সময় দুই দেশের মধ্যে রেলপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে হবে। 

ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আলোকে নয়াদিল্লি, কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ মিশন ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবে।

বাংলাদেশেও কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। কিন্তু এর পরও পরিস্থিতি ভারতের মতো গুরুতর নয়। 

এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের মতো বিপর্যয়ে না পড়তে কভিডের ডাবল বা ট্রিপল মিউটেশন ভেরিয়েন্ট বা করোনার ভারতীয় ধরন ঠেকানোর ওপর জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ওআ/এস এস