ন্যাভিগেশন মেনু

নাটোরে ডিঙি নৌকা বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা


বর্ষায় পানিতে ভরপুর চলনবিল ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। ঐতিহ্যবাহী বাহারি সব ডিঙ্গি নৌকার পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু করোনা ও কঠোর লকডাউনের কারণে হাট-বাজার বন্ধ থাকায় আসতে পারছেন না ক্রেতারা। ফলে ভরা মৌসুমেও কেনাবেচা না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত চলনবিল এলাকার ডিঙি নৌকা ব্যাবসায়ীরা আছেন দুশ্চিন্তায়।

বর্ষায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়, স্কুল-কলেজ-হাটবাজারসহ যোগাযোগের সব জায়গায় ভাসমান মানুষের নিত্যসঙ্গী এসব ডিঙ্গি নৌকা। বর্ষা এলেই চারদিক জলে ডুবে যায় চলনবিলের মাঠঘাট-রাস্তাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। চলনবিল এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট (সাবমারসিবল) বর্ষা এলেই পানির নিচে ডুবে যায়।

তখন ডিঙ্গি নৌকাই চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। তাই বর্ষা এলেই বেড়ে যায় এসব ডিঙ্গি নৌকার কদর। স্থানীয় বাজারগুলোতে বেড়ে যায় কাঠমিস্ত্রিদের ব্যস্ততা। তবে সম্প্রতি কঠোর লকডাউনের ফলে মৃত্যুপ্রায় ডিঙি তৈরির কারখানাগুলো।

সরেজমিনে চাঁচকৈড় হাট ঘুরে দেখা গেছে, আগে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসতো নৌকার হাট। ১৫ থেকে ২০টি কারখানায় তৈরি হতো অসংখ্য নৌকা। বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসতো নৌকা কিনতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো বেচাকেনা। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে যেতো অন্য জেলাতেও। কিন্তু বর্তমান লকডাউনের ফলে ব্যাবসায় দেখা দিয়েছে মন্দাভাব।

তাড়াশের বিলকাঠোর গ্রাম থেকে আব্দুর রহমান ও মান্নন নগরের জব্বার শেখের সাথে কথা হলে তারা জানান, বর্ষায় চারদিক ডুবে গেলে কোনও কাজকর্ম থাকেনা। তখন বিকল্প পেশা হিসেবে মানুষ পারাপারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি এসব ডিঙি নৌকা দিয়ে। এ কারণে তারা চাঁচকৈড় হাটে এসেছিলেন ডিঙ্গি নৌকা কিনতে। কিন্তু প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে নৌকা কেনা তো দুরের কথা, হাটে যেতে পারেনি তারা।

ফার্নিচার মালিক সমিতির সভাপতি ইয়ারুল এবং সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আন্টু জানান, ‘নৌকার চাহিদা থাকা সত্বেও করোনা আর কঠোর  লকডাউনের কারনে বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। কাঠমিস্ত্রিদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে। এদিকে কাঠ ও প্লেনসিটের দামও বেড়ে যাবার কারনে নৌকা তৈরির খরচও বেড়েছে। ১০ হাত মাপের একটা কাঠের ডিঙি নৌকায় আগে খরচ হতো ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। প্লেনসিটের তৈরি ডিঙি নৌকা আকার ভেদে বিক্রি হতো ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে খরচ হচ্ছে কাঠের ডিঙি ২ থেকে ৩ হাজার এবং প্লেনসিটেরগুলো ৩ থেকে ৪ হাজারের মতো। অথচ বেচাবিক্রি নেই।’

স্থানীয় নৌকাব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘এবার করোনার সাথে কঠোর লকডাউন যোগ হবার কারনে নৌকা ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।’

নৌকার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তারা জানান, ‘কাঠমিস্ত্রিদের মজুরি, প্লেনসিট ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকার দাম একটু বাড়লেও বেচাকেনা কম। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে।’

গুরুদাসপুর স'মিল মালিক সমিতির সভাপতি মাহাতাব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক কামাল সরকার বলেন, গত কয়েক বছরে নৌকাব্যবসা ভালো হলেও এ বছর বিক্রি নেই বললেই চলে। এতে আড়তদার ও কারখানা মালিক উভয়ই মহাসংকটে।

এমএএস/এমআইআর/এডিবি/