ন্যাভিগেশন মেনু

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পরিক্ষামূলকভাবে বিদেশী চিয়া সীড ফসলের চাষ


পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পরিক্ষামূলকভাবে সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত বিদেশী চিয়া সিড ফসলের চাষ হচ্ছে।

জানা যায়, চিয়া সিড মূলত মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া উদ্ভিদের বীজ। এটি মধ্য আমেরিকার অনেক অংশে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত শস্যের তালিকায় পড়লেও একে এক ধরণের ভেষজও বলা হয়। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির প্রধান খাদ্য তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করে থাকে। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের দানার মতো। পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতি একে সোনার চেয়েও মূল্যবান মনে করতো।

কৃষি অফিসের পরামর্শে এ বছর দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী  ইউনিয়নের শীবের হাট গ্রামের রফিকুল ইসলাম পরীক্ষামূলকভাবে চিয়া ১৭শতাংশ জমিতে চিয়া সীডের চাষ করছেন।  চিয়াসীড কম খরচে চাষাবাদ করে বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন ওই চাষীর। রফিকুল ইসলাম  জানান ফলন খুব ভালো হয়েছে ।  এ বছর যদি দাম ভালো পাওয়া যায় তাহলে আগামী বছর বানিজ্যিকভাবে চিয়া সীড চাষ করবে। তার চাষাবাদ দেখে অনেক কৃষক চিয়া সীড চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে।  সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি বীজ রোপণ করতে হয় আর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় চিয়া সীড কাটা যায়। চিয়া সীড এর বয়স কাল হল ১শ থেকে ১০৫ দিন। এই ফসলে তেমন কোন রোগ বালাই নাই একবার বালাই নাশক আর একবার  ছত্রাক নাশক স্প্রে করলেই চলে। 

চিয়াসীড চাষে বিঘা প্রতি খরচ ১০- ১২ হাজার টাকা এবং প্রতি বিঘা জমি থেকে ১২০-১৩০ কেজি চিয়া সিড উৎপাদন হয়। তবে অন্যান্য যে কোন ফসলের চেয়ে এটি বেশী লাভজনক। চিয়াসীড স্থানীয় পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন দোকানে এবং অনলাইনে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করে থাকে।  আমদানি নির্ভর এই বিদেশি ফসলের দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানান চাষীরা। এদিকে দেবীগঞ্জ উপজেলায় এই প্রথম চিয়া সীড চাষ হচ্ছে অনেকেই এই বিদেশি ফসল চিনেই না। তাই কৃষি অফিসে গিয়ে প্রশ্ন করছে। এই ফসলে লাভ কেমন ভালো লাভ হলে আগামী বছর দেবীগঞ্জ উপজেলায় অনেক কৃষক চাষ করবে বলে জানান দেবীগঞ্জ কৃষি অফিস।

দেবীগঞ্জ  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাঈম মোর্শেদ  বলেন,  সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের শীবের হাট দাড়ার পার ব্লগের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শেফালী বেগম ওই চাষীকে উদ্বুদ্ধ করে পরিক্ষামূলকভাবে ১৭ শতক জমিতে চিয়া সীড চাষ করায়েছেন। চিয়া সীড প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় চিয়া সিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে।চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবার। এতে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা- ৩ ফ্যাটি এসিড, ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ আছে। এটি রক্তে চিনির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে এবং ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমায়। এই কৃষিবিদ আরও বলেন, দেশের সুপার সোপ এবং বিদেশে এর দাম অনেক ভালো। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে চাষীরা বিক্রি করতে গেলে খুব কম দাম বলে। যদি বিদেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করা যায় তবে চিয়া সীডের চাষাবাদ বাড়বে এবং চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।  

জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার ও পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, উপ-পরিচালক (ভার.) মো. নইমুল হুদা সরকার বলেন, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফসল চিয়াসীড। আমাদের দেশের আবহাওয়া এই ফসল চাষের উপযোগী। এই ফসলে রোগ-বালাই এবং পোকার আক্রমণ নেই। উৎপাদন খরচ খুম কম। দেশে উৎপাদন বাড়লে বিদেশ থেকে আমদানী কমনে এবং কৃষকরা আর্থিকভাবে এই ফসল চাষাবাদ করে লাভবান হবে। এজন্য কৃষকদের চিয়াসীড চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।# ০৩-০৩-২০২৪