ন্যাভিগেশন মেনু

পদ্মাসেতুর ১০ নম্বর পিলারে এবার ফেরি কাকলীর ধাক্কা


এক ধাক্কার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের পদ্মাসেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দিয়েছে ফেরি কাকলী।

শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সকাল পৌনে ৭টার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার সময় কাকলী নামের কে-টাইপ ফেরি পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। তবে এখনও আহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।

পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, 'শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ফেরি কাকলী ধাক্কায় পদ্মাসেতুর ১০ নম্বর খুঁটির পাইল ক্যাপের সামান্য কিছু অংশের কংক্রিট উঠে গেছে। এতে সেতুর তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। তারপরও এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়।  ফেরিতে থাকা যাত্রী ও যানবাহনের বড় ক্ষতি হতে পারতো। এটা অত্যন্ত দু:খজনক।'

মাওয়া নৌ পুলিশের আইসি জেএম সিরাজুল কবির জানান, 'কে টাইপ ফেরি কাকলী বাংলাবাজার থেকে ছেড়ে মাওয়া আসার পথে পদ্মাসেতুর নীচ দিয়ে যাবার সময় ফেরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাওয়া প্রান্তের ১০নং পিলালে ধাক্কা লাগে। ফেরিটির একটা অংশ ফেটে যায়।'

পদ্মাসেতুর খুঁটিতে বারবার ফেরির ধাক্কা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। সেতুর খুঁটি উঠে যাওয়ার পর কয়েক বছর ধরেই পদ্মাসেতুর নিচ দিয়েই ফেরিসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল করছে। তবে এ বছর কেন বারবার ফেরি পদ্মাসেতুর খুঁটিতে ধাক্কা দিচ্ছে?

ফেরি কাকলীর চালক মো. বাদল হোসেন বলেন, 'ফেরিটি পদ্মাসেতুর ১১-১২ খুঁটির মাঝখান দিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু নদীর প্রচণ্ড স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মাসেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির একপাশে ফাটল ধরে। তবে ফাটল পানির স্তরের উপরে থাকায় ফেরিতে পানিও ওঠেনি। পদ্মাসেতুর পিলারেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। ধাক্কা লাগার পর ফেরিটি নিয়ে নিরাপদে শিমুলিয়া ঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।'

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেতুর ১০ নম্বর খুঁটিতে প্রচণ্ড ধাক্কায় খুঁটির পাইল ক্যাপের কংক্রিট উঠে যায়। ফেরিতে থাকা এক যান আরেক যানকে ধাক্কা দেয়। অনেকই পড়ে যান। এই সময় ফেরিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

গত তিন সপ্তাহে পদ্মাসেতুর পিলারে তিনবার ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটলো।

এর আগে গত ৯ আগস্ট রাতে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর পদ্মাসেতুর ১০ নম্বর খুঁটিতে আঘাত করে। এতে ফেরিতে থাকা দুইটি প্রাইভেটকার ও একটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফেরির ৫ যাত্রী আহত হয়। এ ঘটনায় পদ্মাসেতু কর্তৃপক্ষ লৌহজং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে এবং ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার ও হুইল সুকানীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। 

এছাড়া মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) যুগ্মসচিব ও বিআইডব্লিউটিসি'র পরিচালক (কারিগরি) রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্তকমিটি গঠন করে কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার আগেই ফেরি আবার পদ্মাসেতুর খুঁটিতে আঘাত করে।

এছাড়া ২৩ জুলাই নির্মাণাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ‘শাহজালাল’ নামে রো রো ফেরি ধাক্কা দেয়। এতে ফেরিটির অন্তত ২০ জন যাত্রী আহত হন। সে ঘটনার পরও ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আব্দুর রহমান ও সুকানী সাইফুল ইসলামকে বরখাস্ত করে বিআইডব্লিউটিসি।

ঘটনা তদন্তে ওইদিনই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিআইডব্লিউটিসি। তাদের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল পিলারের সঙ্গে সংঘর্ষের পেছনে রো রো ফেরিটির ইনচার্জ মাস্টার আব্দুর রহমান খান ও সুকানি সাইফুল ইসলামের দায়িত্বহীনতা রয়েছে। ফেরি বা অন্য কোনো জলযানের সংঘর্ষ থেকে নিরাপদে রাখতে পদ্মাসেতুর পিলারগুলো রাবার দিয়ে মোড়ানো, ঘাট স্থানান্তর ও স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে সক্ষম ফেরি চলানোরপরামর্শও দিয়েছে ওই কমিটি। 

এ ছাড়াও নৌমন্ত্রণালয় থেকে পৃথক আরেক কমিটিও পদ্মাসেতু ও ফেরি যাত্রীর নিরাপত্তায় রিপোর্ট পেশ করেছে।

এর আগে ২০ জুলাই রো রো ফেরি শাহ মখদুম ১৬নং পিলারের সাথে ধাক্কা লাগে। এই নিয়ে মোট পাঁচ বার পদ্মাসেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটলো।

পদ্মাসেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগেও চারবার ফেরি পদ্মাসেতুর পিলারে আঘাত করেছিল। এসব সেতু সেভাবেই তৈরি করা হয়। গত ১০০ বছর এই নদীতে যেসব জলযান চলেছে, সেগুলো সেতুতে ধাক্কা দিলে কিছু হওয়ার আশঙ্কা নেই। বরং ফেরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এনইউ/এডিবি/