ন্যাভিগেশন মেনু

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরই জীবনের প্রথম নিজের ঘর জোব্বারের


আব্দুল জোব্বার (৭২), নিজের কোন জায়গা ছিল না, তাই ছিল না ঘর। অন্যের জায়গায় থাকতেন। এবার ঘর তো হয়েছেই, সাথে পেয়েছেন দলিলসহ জমি। একেবারেই নিজের মতো করে থাকবেন নিজের ঘরে। কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না।

আব্দুল জোব্বার কখনো ভাবেননি নিজের ঘর হবে। সেই ভাবনা এবার সত্যি হলো।  মুজিববর্ষে তিনি পেলেন বঙ্গবন্ধু কন্যার উপহার ‘নিজের ঘর’।

জন্মের কিছুদিন পরই বাবা মারা যায় আব্দুল জোব্বারের। বাবার সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না। জন্মের পর থেকেই অন্যের জায়গায় থাকতেন। 

এবার তার ঘর হয়েছে। সাথে জায়গার দলিল। এ এক অন্যরকম অনুভুতি। বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে নিজের ঘরে থাকবেন।

স্বাধীনতার পরের বছর বিয়ে করেন জোব্বার। বিয়ের পর থেকেই অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি। তাদের ঘরে দুই মেয়ে জন্ম নেয়। তাদের বিয়ে হয়েছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের জীবন-যাপন করছে তারা।

বয়স সত্তুর পেরিয়ে গেলেও নিজের জায়গা জমি বলতে কিছুই করতে পারেননি আব্দুল জোব্বার। এবার প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় জায়গাসহ বাড়ি পেয়ে তার আনন্দটা একটু অন্যরকম।

আব্দুল জোব্বারের বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার নুনগোলা ইউনিয়নের রজাকপুর গ্রামে। এলাকায় শুনেছিলেন সরকারিভাবে যাদের বাড়িঘর নেই, জমি নেই, তাদের সরকারিভাবে বাড়ি দেওয়া হবে। প্রথমে কথাটি বিশ্বাস হয়নি তার। তারপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যাদের বাড়ি নেই জায়গা নেই তাদেরকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সরকারি জায়গায় বাড়ি করে দেওয়া হচ্ছে। 

সবকিছু জানার পর নুনগোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলিমুদ্দিন সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি তার সব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে কাগজপত্র যথাযথ দপ্তরে পাঠিয়ে দেন। তারপরও জোব্বারের বিশ্বাস হয়নি, তিনি ঘর পাবেন। নিজের বলতে কিছু একটা তার হবে।

রবিবার (২০ জুন) সোয়া ১২টায় জমিসহ ঘরের কাগজপত্রের একটি ফাইল হাতে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন জোব্বার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি তিনি। আব্দুল জব্বার ও তার স্ত্রী ওলেদা বেগম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেছেন। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে বগুড়া সদর উপজেলায় জমিসহ ঘর পেলেন ২২৩টি পরিবার। সদর উপজেলার ২২৩ পরিবারের একটি আব্দুল জোব্বারের। 

গত কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ৫৩ হাজার ৩৪০টি ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই বগুড়া সদর উপজেলার ভুমিহীনদের জমি ও গৃহ হস্তান্তর করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে গৃহ হস্তান্তরকালে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সালাহ্উদ্দিন আহমেদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান সফিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য মাফুজুল ইসলাম রাজ, উপস্থিত ছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রত্যেক উপকারভোগীর জমিসহ ঘর, জমির দলিল ও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সনদ হস্তান্তর করা হয়। 

উল্লেখ্য দ্বিতীয় ধাপে বগুড়া জেলার ১২ উপজেলার ৮৫৭টির মধ্যে সদর উপজেলায় ২২৩টি, ধুনটে ১২০টি, দুপচাঁচিয়ায় ১৫০টি,আদমদীঘিতে ২৫টি, গাবতলীতে ২৫টি, কাহালুতে ৩০টি, নন্দীগ্রামে ৮০টি, সারিয়াকান্দিতে ৫১টি, শাজাহানপুরে ১৩টি, শেরপুরে ১৭টি, শিবগঞ্জে ৭৩টি এবং সোনাতলায় ৫০টি পরিবার ঘর পেয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান জানান, 'আব্দুল জোব্বারের মতো গৃহহীন, ভূমিহীনদের বাছাই করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রদান করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এসব উপকারভোগীদের বাছাই করে যথাযথ নিয়ম মেনে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।'

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, 'প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রত্যেক উপকারভোগীর জমিসহ গৃহ, জমির দলিল ও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সনদ হস্তান্তর করা হয়েছে। ২ দফায় বগুড়ায় ২ হাজার ৩০৯টি ঘরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। বগুড়ার আরও গৃহহীন ভূমিহীনদের তালিকা তৈরি করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।'

এএস/এডিবি/