ন্যাভিগেশন মেনু

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পানি চুক্তির পর্যবেক্ষণ শুরু


প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ২ জানুয়ারি থেকে ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ি পানির প্রাপ্তি পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধি দল ফারাক্কা পয়েন্টে এবং পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক পানি চুক্তি ২৫ বছরে পদার্পণ করেছে। শুস্ক মৌসুমে পদ্মা নদীতে পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়।

পানি চুক্তি অনুযায়ী, শুস্ক মৌসুমে পানির ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ি প্রাপ্যতা নিশ্চিত হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দুই দেশের প্রতিনিধিদল গঙ্গা ও পদ্মার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় পাবনার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণের জন্য দুই সদস্যের ভারতীয় দল বাংলাদেশে এসেছে। একই সময়ে বাংলাদেশের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারতে পৌঁছেছে।

চুক্তি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে পানির প্রবাহ পরিমাপের কথা থাকলেও দিনটি শুক্রবার হওয়ায় ২ জানুয়ারি থেকে পানি প্রবাহ পরিমাপ করা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগ।

পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান, বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণের জন্য ২ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছেন। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের উপ-পরিচালক শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর এবং কমিশনের সহকারী পরিচালক শ্রী নাগনরা কুমার। প্রতিনিধিদল সকাল থেকে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের ২ হাজার ৫০০ ফুট উজানে পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন।

তিনি আরও জানান, একই সময়ে ৪ সদস্যের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যার নেতৃত্বে রয়েছেন যৌথ নদী কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম সাইফুদ্দিন গঙ্গা নদীর ফারাক্কার দুটি পয়েন্টে গঙ্গার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করবেন। 

১৯৯৬ সনে সাক্ষরিত গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির আওতায় প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দশ দিনওয়ারি ভিত্তিতে ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর পানির প্রবাহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্টন করা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানির প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে।

দ্বিতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০ হাজার কিউসেক থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে এবং অবশিষ্ট পানি পাবে এবং তৃতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি পানি প্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি বাকিটা পাবে বাংলাদেশ।

তবে চুক্তি অনুযায়ী, ১১ মার্চ থেকে ১০ মে সময়কালে বাংলাদেশ, ভারত উভয়ই একটি বাদ দিয়ে একটি ১০ দিন অনুক্রমে গ্যারান্টিযুক্তভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে।

বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত গত বছরের পানি প্রবাহের ডাটা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় প্রাপ্ত গঙ্গার পানির মোট পরিমান ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার কিউসেক, ফারাক্কায় প্রাপ্ত বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৬০ হাজার ০৬১ কিউসেক এবং ভারতের প্রাপ্ত হিস্যা ছিল ৪০ হাজার কিউসেক। এ সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির পরিমান ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৫৭৪ কিউসেক।

তবে এ বছর শুরুতেই পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গত বছরের সমপরিমান না হলেও পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ রয়েছে বলে জানিয়েছে হাইড্রোলজি বিভাগ। গত ৩১ ডিসেম্বর বছরের শেষ দিনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল প্রায় ৮৮ হাজার কিউসেক।

পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন আরও জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ পর্যবেক্ষণ শুরু করার পর পানির প্রবাহের প্রকৃত হিসাব পাওয়া যাবে। শনিবার থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে এবং প্রতি ১০ দিন পর পর পানির প্রাপ্যতা আনুসারে পানির হিস্যা এবং প্রাপ্তিতা পরিমাপ করা হবে।

সিবি/এডিবি