ন্যাভিগেশন মেনু

বিশ্বনাথে ২শ বছরের পুরনো ‘পলো বাওয়া ‘ উৎসবে সহস্র মানুষ


গ্রাম-বাঙলার অন্যতম উৎসব হলো ‘পলো বাওয়া।’ অর্থাৎ কয়েকগ্রামের মানুষ নির্দ্দিষ্ট দিনে একত্রিত হয়ে এলাকার কোন হাওড়-বিলে গিয়ে মাছ শিকার করেন। যদিও সাম্প্রতিককালে এই উৎসব অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে।

তবে দেশের যেসব এলাকায় হাওড়-বিল অবস্থিত সেখানে এখনো প্রতিবছর এই সময়টাতে ‘পলো বাওয়া’ উৎসবের আয়োজন করা থাকে। এবারও সিলেট জেলার বিশ্বনাথে  হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ-উৎসবে উদযাপিত হলো ২শ বছরের পুরনো  ‘পলো বাওয়া’ উৎসব।

শিকড়ের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের টানে প্রতি বছরই আয়োজন করা হয় এই উৎসবের। বুধবার দুপুরে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরী গ্রামের (দক্ষিণের বিল) বড় বিলে এই মৎস্য শিকার করা হয়।

এতে প্রায় চার শতাধিক সৌখিন মৎস্য শিকারি অংশ গ্রহণ করেন। আর উপভোগ করেন আরও অর্ধ সহস্র মানুষ।

এদিন কনকনে শীত উপেক্ষা করে সাতসকালেই বিলের ধারে জড়ো হন শিকারিরা। এতে দলভুক্ত হয় শিশু-কিশোরও। মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম পাশে নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের প্রহর গুনতে থাকেন সকলেই। সময় হলেই একযোগে ‘আনন্দ চিৎকার’ দিয়ে বিলে নামার অপেক্ষায় সবাই। এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে বিলের ধারে ভিড় জমান উৎসুক জনতাও।

দুপুর ১২টা বাজলেই ভূ-দৌঁড়ে পলো নিয়ে বিলে ঝাঁপ দেন শিকারি দল। দীর্ঘসময় হিম শীতল জলে মাছ শিকারে মেতে উঠেন তারা। এসময় ধরা পড়ে বোয়াল, রুই, কাতলা, শোল, গজার ও বাউশ মাছ।

গ্রামবাসীরা জানান. গ্রাম পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্তানুযায়ী ভাদ্র মাস থেকে বিলে সকল প্রকার মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এতে বিলে জড়ো হয় বিভিন্ন জাতের প্রচুর মাছ। এই পাঁচ মাসে মাছগুলো সুযোগ পায় বড়ো হওয়ার। ২শ বছরের পুরনো ‘পলো উৎসবের’ এক সপ্তাহ পূর্বে পঞ্চায়েতের সভা ডেকে শৃংঙ্খলা রক্ষায় নেয়া হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

সভার পরপরই উৎসবের মত গ্রামের ঘরে ঘরে পলো তৈরী, মেরামত ও সংগ্রহের কাজ চলে। এরপর মাঘ মাসের পহেলা দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে একযোগে আমরা মাছ ধরতে বিলে নামি এবং অধিকাংশ শিকারিই মাছ হাতে বাড়ি ফিরি।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী রহমত আলী, সমছুল ইসলাম, মনোহর আলী বলেন, বিদেশ থেকে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য পলো বাওয়া উৎসবে অংশ গ্রহণ করা। আমরা আনন্দ পাই। আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছর এ আয়োজন করেন গ্রামবাসী।স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলায় এটিই সবচেয়ে বড় ‘পলো বাওয়া উৎসব’।

যুগযুগ ধরে এ ঐতিহ্য চলমান। আমরা গ্রামবাসী মিলেমিশে প্রতিবছর এ বিল থেকে উৎসবের মতো দেশীয় প্রজাতি মাছের সু-স্বাদু আহরণ করে থাকি।

এস এস