ন্যাভিগেশন মেনু

বেনাপোলে নির্যাণ তিথি মহোৎসব উদযাপিত


লাখো দর্শক ভক্ত ও শ্রোতার আগমনে সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা ভারত উপমহাদেশের অন্যতম তীর্থস্থান স্থলবন্দর বেনাপোল পাটবাড়ীতে উদযাপিত হয়েছে হরিদাস ঠাকুরের নির্যাণ তিথি মহোৎসব ।

সেই সঙ্গে আশ্রম প্রাঙ্গনে বসেছিল ২ দিন ব্যাপি মেলা সাথে ধর্মীয় সঙ্গীতযজ্ঞ। মিলন মেলায় পরিনত হয় মেলা প্রাঙ্গন।

বৈষ্ণবকুল শিরোমনি শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুরের ভজন কানন নামে পরিচিত সুদীর্ঘ সাড়ে ৫শ‘ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ও গৌরাঙ্গ মহা প্রভুর স্মৃতি বিজড়িত স্থান বেনাপোল।

বৃহস্পতিবার শেষ হলো হরিদাস ঠাকুর পাটবাড়ী আশ্রমে দুই দিন ব্যাপী ৪৯৫তম নির্যাণ তিথি মহোৎসব।

 বুধবার ও বৃহস্পতিবার  ছিল  ভক্তবৃন্দের উপচে পড়া ভীড়। প্রতি বছর এখানে হরিদাস ঠাকুরের নির্যাণ তিথি মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বুধবার অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে দেশ, বিদেশ থেকে আসা লাখো ভক্তের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে পাঠবাড়ী আশ্রম। ভারত থেকে আসা ভক্তবৃন্দের পদচারনায় বেনাপোলের দুই কিলোমিটার এলাকা ছিল মুখরিত।

ভারত থেকে আসা অয়ন মিত্র বলেন, ভারতে অনেক জায়গায় ঘুরেছি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, কিন্তু  বাংলাদেশের পাটবাড়ীর মতো এতো ভক্ত পাইনি কোথাও।

ভারতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নিখিল কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, হরিদাস ঠাকুরের আশ্রম বেনাপোলের পাটবাড়ীর মত এত সুন্দর অনুষ্ঠান কোথাও দেখিনি। বৃহৎ ভারতবর্ষ অনেক ঘুরেছি কিন্তু হরিদাস ঠাকুরের আশ্রম ব্যাতিক্রম।

কলকাতার পূর্নিমা ও তার মেয়ে নবরুপা বলেন, আমি এই প্রথম বেনাপোল পাটবাড়ি শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ি আশ্রমে এসেছি। এখানে এসে আমার অন্তরটা পূর্ণ হয়ে গেল। আমি বলে বুঝাতে পারব না যে, এখানে এসে কতটা নতুন জীবন পেলাম। আমি মনে করি মানুষের পাপ পূর্ন ঘোচানোর মত একটি জায়গা এই পাটবাড়ী হরিদাস ঠাকুরের নির্যাণ তিথি অনুষ্ঠান।

আত্মশুদ্ধি ও ইহ জগতের পূণ্যের জন্যে বাগেরহাট থেকে আসা স্কুলছাত্রী গিরিবালা সেন বলেন, তার ভাল লেগেছে হরিদাস ঠাকুরের মেলা দেখে কীর্ত্তন শুনে। এতো মানুষের মাঝে কত আনন্দ বলার ভাষা নেই তার।

একই কথা বলেন, খুলনা থেকে আসা অর্পনা বিশ্বাস ও বাগেরহাট থেকে আসা ছবি রানী। তারা বলেন তিনি ছিলেন জগত শ্রেষ্ঠ মনীষী তার অনুষ্টানে আসতে পেরে ধন্যতারা।

রংপুর থেকে আসা রাধা রানী ও চট্রগ্রাম থেকে আসার শীলা দেবী ও খুলনার শিউলী রানী বলেন, শুনেছি হরিদাসের নির্যান তিথি মহোৎসবের গল্প। বাস্তবে দেখতে আসতে পরে ভাল লেগেছে তদের।

ভারতের বনগাঁয়ের শিল্পী ত্রীদেবী গাঙ্গুলি বলেন, মহাভারতের অনেক বড় বড় দর্শনীয় স্থানে গিয়েছেন গান করেছেন। তবে শ্রী হরিদাস ঠাকুর ছিলেন মানব আত্মা, মানবরত্ন ও মানব কুলের দিকপাল।

তার পরম আত্মার যোগসূত্র অনেক প্রসারী। নিরবে নির্ভৃতে লাখো দর্শক শুনেছেন তার কীর্ত্তন। পরম সুখ আনন্দ উপভোগ করেছে ভক্ত দর্শক ও আগতরা। তার কাছে নতুন একটি অবিস্মরণীয় দিন এটি।

বেনাপোল ব্রম্ম হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ী আশ্রমের সাধারন সম্পাদক ফণী ভূষন পাল বলেন, দেশের ৬৪টি জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে কয়েক’শ গাড়ি বহরে হাজার হাজার ভক্তের সমাবেশ ঘটে এখানে। তাছাড়া পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশের ভক্তরাও যোগ দেন এ অনুষ্ঠানে। ফলে অন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের চেয়ে এ অনুষ্ঠানটি হয়ে থাকে ভিন্ন। জন সমাগমে মুখরিত হয় এ এলাকা।

জাতিভেদ অন্ধ-কুসংস্কার অনাচারের মধ্যে যখন হিন্দু জাতি ডুবেছিল সেই সন্ধিক্ষণে জাতিকে মুক্ত করতে জন্ম নিয়েছিলেন কলির ভগবান গৌরঙ্গ মহাপ্রভু ।

বেনাপোল পাটবাড়ি শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুর আশ্রমের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দেবনাথ বলেন, লাখো ভক্তদের উপস্থিতিতে দুই দিন ব্যাপী এ নির্যাণ তিথি উৎসবের সমাপনী হলো।

বৃহস্পতিবার বেলা ২ টায় আগত সকল ভক্তদের  মাঝে মহোৎসব সমাপন্তে মহাপ্রসাদ ও অণুপ্রসাদ বিতারনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এ মিলন মেলা।

শার্শা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও যশোর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বৈদ্যনাথ দাস বলেন, এবার এ নির্যাণ তিথিতে বিদগ্ধ আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দ্বাদশ শিবকালী মন্দির বুধহাটা সাতক্ষীরা জেলার ভক্ত প্রবর বিশ্বমঙ্গল কৃষ্ণদাস, শ্রী শ্রী নিতাই পৌর গোপাল সেবাশ্রম, মাগুরা শ্রী চিন্ময়ানন্দ দাস বাবাজী মাহরাজ, ঢাকা থেকে আগমণ ভক্ত প্রবর বৈষ্ণব দাসানুদাস শ্রীমুকুল মিত্র। লীলা কীর্ত্তন পরিবেশনায় ছিল শ্রী শ্রী রাধা গিরিধারী লীলা কীর্ত্তন সম্প্রদায়, পশ্চিমবঙ্গ ভারত।

পাটকীর্তন ও ভগবত আলোচনা এবয় নামাচার্য হরিদাস ঠাকুরের সূচক কীর্তন পরিবেশন করেন শচীনন্দন (সাধন) দাস বাবাজী ও পর্ষদবৃন্দ মঠাধ্যক্ষ লোকনাথ আশ্রম তালবাড়ি, শালিখা মাগুরা।

ভোগ আরতী কীর্তন পরিবেশন করেন, শ্রী চিম্ময় দাস বাবাজী মহারাজ ও পর্ষদগন, শ্রী শ্রী নিতাই পৌর গোপাল সেবাশ্রম মাগুরা। অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার মন্ডল।


এস এ / এস এস