ন্যাভিগেশন মেনু

মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, মানববন্ধন


যশোর শহরের রেল সড়কে অবস্থিত একটি মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বর্বরোচিত নির্যাতনে মাহফুজ নামে এক কিশোরকে হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের ফাঁসির দাবিতে জীবননগরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ মে) বেলা সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর বাসস্ট্যান্ডে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

নিহত মাহফুজুর রহমান জীবননগর পৌরসভার নারায়নপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে এবং জীবননগর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

মানববন্ধনে এলাকার সুধী সমাজ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জীবননগর ডিগ্রি কলেজের সাবেক উপধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, জীবননগর পৌরসভার সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকি, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী নাসির উদ্দীন প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন, মাহফুজুর রহমানের হত্যাকারীদেরকে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। তারা দোষীদের ফাঁসি দাবি তোলেন। মানববন্ধন শেষে তারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

উল্লেখ্য, যশোরে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে মাহফুজুর রহমান নামে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রবিবার (২৩ মে) দুপুরে ১৪ জনকে আসামী করে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত ১৪ জনকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, নিহত মাহফুজুর রহমান মাদকাসক্ত থাকায় তার বাবা মাসখানেক আগে তাকে যশোর শহরের রেল সড়কের মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসনকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান। শনিবার (২২ মে) সকালে রুটি বানানোর জন্য মাহফুজুর রহমান কেন্দ্রের রান্নাঘরে যান। এ সময় কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে রুটি বানাতে মানা করেন। তাদের নিষেধ না শোনায় কেন্দ্রের অন্য নিবাসীদের নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাহফুজুরকে রুটি তৈরির ব্যালন দিয়ে মারপিট করেন। শৌচাগারে নিয়ে তার মুখে পানি ঢালা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি মলত্যাগ করলে তাকে দিয়েই তা পরিষ্কার করানো হয়। একপর্যায়ে তিনি মারা যান।

পরে কেন্দ্রের লোকজন তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে রেখে আসেন। স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে অজ্ঞাতপরিচয়ে লাশটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। মাহফুজুরের বাবা হাসপাতালে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্ত করে থানায় অভিযোগ দেন। পুলিশ পুনর্বাসনকেন্দ্রে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ জব্দ করে।

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার পর ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ জব্দ করা হয়।

ফুটেজে দেখা যায়, একটি কক্ষে ১২ থেকে ১৪ জনে মিলে মাহফুজুরকে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে। মারপিটের কারণে একপর্যায়ে তিনি মলত্যাগ করেন। তখন তাকে দিয়েই তা পরিষ্কার করানো হয়। পরে শৌচাগারে নিয়ে তার মুখে পানি ঢেলে আবার নির্যাতন করা হয়। এমন অমানবিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাসুম করিম, আশরাফুল কবিরসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিহত মাহফুজুরের বাবা মনিরুজ্জামান বলেন, মাহফুজুর মাদক সেবন করতো। সুস্থ–স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ২৬ এপ্রিল তাকে যশোরের মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। শনিবার বিকেলে খবর আসে যে তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তন্ময় বিশ্বাস বলেন, শনিবার দুপুরে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থেকে একটি লাশ জরুরি বিভাগে আনা হয়। লাশটি বহনকারী ও নিহত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ না করেই কৌশলে তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, লাশের পিঠ ও ঘাড়ে আঘাতের দাগ ছিলো।

আটক অবস্থায় কেন্দ্রের পরিচালক মাসুম করিম বলেন, মাহফুজুর কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন (নিবাসী) একজনকে ধাক্কা দেন। ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন মিলে মাহফুজুরকে মারধর করেন। এতে তিনি মারা যান।

এসকে/এসএ/এডিবি/