ন্যাভিগেশন মেনু

মালয়েশিয়াগামী শতাধিক তরুণীর সংসার স্বপ্নভঙ্গ, প্রাণ গেল ১৫


সব নারীর আজন্ম স্বপ্ন থাকে বিয়ে করে সন্তান-সন্তনিসহ ঘর-সংসার পাতার। ওরাও ঘর-বাড়ি ফেলে কেউ বা বাবা-মাকে হারিয়ে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার শিবিরগুলোতে।

মনের মতো বর না পেয়ে স্বচ্ছলভাবে জীবন কাটাতে দল বেঁধে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন রোহিঙ্গা তরুণীরা। কিন্তু বিধি বাম। বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে নৌকা ডুবিতে অন্তত ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। আর শতাধিক তরুণী প্রাণ বাঁচলেও সংসার স্বপ্নভঙ্গ হলো।

নৌকা ডুবিতে উদ্ধার হওয়া বেশ কয়েকজন তরুণী এ তথ্য জানিয়েছেন। কক্সবাজারের টেকনাফের বঙ্গোপসাগরে সোমবার গভীর রাতে এ নৌকা ডুবি হয়। মর্মদন্ত কাণ্ডের পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনও নিখোঁজ অন্তত ৫২ জন। তাদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।

মর্মান্তিক ওই ঘটনায় দায়ী দুই দালালকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম হামিদুল ইসলাম জানান, ১৩৮ জনের মধ্যে নিখোঁজ ৫২ জন। তাদের উদ্ধারে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। তিনি বলেন, ‘উদ্ধার অভিযানকালে ওই বড় বোট থেকে দুই দালালকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এরপর আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

নৌকা ডুবি থেকে উদ্ধার পাওয়া টেকনাফের শামলাপুর ক্যাম্পের তরুণী খতিজা বেগম বলেন, ‘বাবা নেই, তাই যৌতুক দিয়ে বিয়ে করা সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যৎ অন্ধকার চিন্তায় জীবনটা এলোমেলো চলছে।পরিচিতদের মাধ্যমে জেনেছি, মালয়েশিয়ায় স্থানীয় ও প্রবাসীরা বিনা যৌতুকে তরুণীদের সম্মান দিয়ে বউ করে নেন। সুখের সংসারী হতেই ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছিলাম।

কিন্তু বিধি বাম। ভাগ্য আমাদের সহায় হয়নি।’ একই কথা বলেন মধুরছড়া ক্যাম্প থেকে ট্রলারে ওঠা রোকসানা বেগম, জাদিমুরার হোসনে আরা, লম্বাশিয়ার ইয়াসমিন। তারা বলেন, ‘ক্যাম্পে জীবনটা বিষিয়ে উঠেছে। স্বজাতিরাই অসহনীয় আচরণ করে। এখানে সময়টা অতিবাহিত হলেও বুড়িয়ে যেতে হচ্ছে ।

পরিচ্ছন্ন ভবিষ্যতের সন্ধানে আমরা ঝুঁকি নিয়েছি।’উদ্ধার হওয়া এসব রোহিঙ্গা তরুণীর সঙ্গে রয়েছেন কিছু বিধবা ও স্বামী-পরিত্যক্তাও। তাদের মধ্যে নূর বানু ও ছলেমা খাতুন বলেন, ‘কোনো একটা কাজে যোগ দিয়ে সন্তান ও নিজেদের সামনের দিনগুলো সুন্দর করার আশায় আমরা নৌকায় করে মালয়েশিয়া পৌঁছাতে চেষ্টা করেছিলাম।

এভাবে মাঝ সাগরে নৌকা ডুবে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে কল্পনাও করিনি।” সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন শাসকদল আওয়ামি লিগের সভাপতি মুজিবুর রহমান উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা ভেঙে যাওয়া নিজেদের স্বপ্নের কথা বলার পাশাপাশি আরও জানান, অর্থলোভী পাচারচক্র ইচ্ছা করেই অমানবিকভাবে সাগরের মাঝপথে নৌকা ফুটো করে ডুবিয়ে দিয়েছেন— এমন ধারণা তাদের। 

ডুবে যাওয়া নৌকায়  ১২০ থেকে ১২৫ নারী-পুরুষ ও শিশু ছিল। প্রশাসনিক কড়াকড়িতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাগরপথে মালয়েশিয়া মানবপাচার চক্র।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সোমবার রাতে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাটি ডুবে যায়। কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ঘটা ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহত নারী-শিশুসহ ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭১ জনকে।

উদ্ধার ও নিহতদের মাঝে অধিকাংশই নারী। যাদের সিংহভাগই তরুণী। কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিজিবি ও সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির পাশাপাশি উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টারও। কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশন কমান্ডার লে. নাঈম-উল হক উদ্ধার হওয়াদের বরাত দিয়ে বলেন, টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সৈকতের বাহারছড়া উপকূল হয়ে দেড় শতাধিক জনের মতো রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে সোমবার রাতের আঁধারে দুটি নেীকায় ওঠে।

গভীর রাতে হঠাৎ একটি নৌকার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে ধীরে ধীরে সাগরে গভীর জলে ডুবে যায়। ভয়ে এবং সাঁতার না জানায় শিশু ও নারীদের অনেকে ডুবে যায়। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রব জানান, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বলেছেন, মালয়েশিয়া যেতে জনপ্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের রাতের আঁধারে নৌকায় তুলে দেয় দালালচক্র।

অন্তত বিয়ে করে নিরাপদ জীবনের আশায় মালয়েশিয়া যেতে ঝুঁকি নেন তারা। এদিকে মানবপাচার রোধে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা জোর তৎপরতা ও প্রচারণা চালালেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি এটি। অভিযোগ আছে, টেকনাফ সদরের লম্বরী, হাবিরছড়া, মিঠাপানিরছড়া, বাহারছড়ার নোয়াখালী পাড়া, জুম্মাপাড়া, কচ্চপিয়া, বাঘঘোনা বাজার, মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর, চৌফলদন্ডী, নাজিরারটেকসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে চিহ্নিত কতিপয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির সহায়তায় এ অপতৎপরতা চলছে।

এস এস