ন্যাভিগেশন মেনু

মুসল্লি বেশে শব-ই-বরাতে ডাকাতি


শব-ই বরাতের পবিত্র রাতে কুমিল্লা জেলার নিমসাগর আড়ৎ এলাকায় লেবু বিক্রি করে আব্দুর রহমান বিশ্বাস নামে এক লেবু চাষী।  আরেক কৃষক মোকশেদ আলীকে সাথে নিয়ে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি।

তারা ভাড়া করা  পিকআপ ভ্যানে (ঢাকা মেট্রো ন-১৯-১২৮৩) ফিরছিলেন। রবিবার রাত আনুমানিক সোয়া দুইটার দিকে তাদের গাড়িটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের জয়পুর-কেলিয়া এলাকায় এলাকায় পৌঁছালে মুসল্লীর ছদ্মবেশে কয়েকজন সশস্ত্র ডাকাত পিকআপ ভ্যানটিকে একটি বাস দিয়ে সামনে ব্যারিকেড দেয়। ডাকাতরা সবাই গায়ে পাঞ্জাবী এবং মাথায় টুপি পড়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল শবে-ই বরাতের পবিত্র রাতে নামাজ পড়ে গভীর রাতে বাড়ি ফিরছিল তাঁরা।

চাকু ও চাপাতি হাতে বাস থেকে নেমেই ডাকাতরা কৃষক আব্দুর রহমান ও মোকসেদ এবং পিকআপ ভ্যান চালক সোলাইমানের ব্যাগ ও পকেট তল্লাশি শুরু করে এবং নগদ টাকা ও তিনটি মোবাইল নিয়ে নেয়।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার  বৈলতলা গ্রামের মো: খলিলের ছেলে ড্রাইভার সোলাইমান বলেন, “আমি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। যেহেতু পবিত্র শব-ই-বরাতের রাত ছিল, তাই আমরা সবাই খুবই নিরাপদ বোধ করছিলাম রাত বেশি হলেও। হঠাৎ একটি দ্রুতগামী বাস আমার গাড়ীর সামনে ব্যারিকেড দেয়। গায়ে পাঞ্জাবি ও মাথায় টুপি পরিহিত চার-পাঁচজন লোক বাস থেকে নেমেই আমাদের বলে, সাথে যা আছে দিয়ে দাও। না দিলে জবাই করে ফেলবো।”

তিনি বলেন, “ভয় পেয়ে আমি আমার পকেটে থাকা প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ডাকাতদের হাতে তুলে দিই।"

তবে লেবু চাষী আব্দুর রহমান বিশ্বাস ডাকাতদের কাছে তার কাছে নগদ টাকা বেশি নেই বলে জানান। সেটা শোনার সাথে সাথেই ক্ষুব্ধ ডাকাতরা তাকে নির্দয়ভাবে ছুরিকাঘাত করতে থাকে।

ডাকাতরা আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমি ও মোকসেদ মিলে গুরুতর আহত আব্দুর রহমানকে নিকটস্থ আলাদিনস হাসপাতালে নিয়ে আসি ড্রাইভার কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন। 

গুরুতর আহত আব্দুর রহমানের ছেলে শাহিন আলম রাকিব ঘটনা শুনে দ্রুত তার পিতাকে ধামরাইয়ের আলাদীনস হাসপাতাল থেকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

রাকিব বলেন, “পবিত্র শব-ই-বরাতের ছুটি থাকায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো অভিজ্ঞ সার্জন ছিল না। আমি পরে আমার বাবাকে সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করি।“

সে আরো বলেন, “আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজধানী ঢাকা থেকে অভিজ্ঞ সার্জন এনে দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করেছি। তবে ডাক্তার  আমাকে জানিয়েছেন যে, রোগী এখনও আশংকামুক্ত নয়।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে রাকিব বলেন, “হাসপাতাল থেকে রিলিজ নেয়ার পরেই আমরা ধামরাই থানায় মামলা করব।“

বাংলাদেশ পোষ্টের এই সংবাদদাতা ঢাকা জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার এবং এলিট ফোর্স র‌্যা‌পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন -৪ (র্যাব) কমান্ডিং অফিসারের কাছে ঘটনার বিস্তারিত  মেসেজ করেন। 

পরবর্তীতে র‌্যাব-৪ এর নবীনগর ক্যাম্পে দায়িত্বরত আবু তাহের নামে এক কর্মকর্তা আহতের ছেলে রাকিবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন এবং বিস্তারিত জানতে চান। র‍্যাব কর্মকর্তা  তাহেরের সঙ্গেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

তবে ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না বলে জানান তিনি। তাছাড়া আহত আব্দুর রহমানের ছেলেও পুরো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে পারেনি বলে দাবি করেছেন উক্ত র‍্যাব অফিসার।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, অপরাধীদের শনাক্ত করার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই।

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, “খবর পেয়ে উপ-পরিদর্শক বাবুল হোসেনকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি।"  তিনি এই প্রতিবেদককে উপ-পরিদর্শক বাবুল হোসেনের সাথে বিস্তারিত কথা বলার পরামর্শ দেন।

তবে এ দুঃসাহসী ডাকাতির বিষয়ে এস.আই বাবুল কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছে।

তিনি বরং সাভার সেনানিবাসের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পবিত্র শবে বরাতের একই রাতে আরেকটি ডাকাতির কথা জানান এই প্রতিবেদককে।

তিনি বলেন, আরেকজন ব্যবসায়ী বিশ্বরোড থেকে পাবনায় ফিরছিলেন পিক আপ ভ্যানে করে। বাস দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে পিকআপ ভ্যানকে থামিয়ে ডাকাতরা ব্যবসায়ীদের নগদ টাকা-পয়সা ছিনতাই করে নিয়ে যায় বলে শুনেছি।

ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সাভার সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন। তবে এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কোনো মামলা করেননি বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে শবে-ই বরাতের রাতে মুসল্লি বেশে ডাকাতির বিষয়ে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, “এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই। ভিকটিম মামলা করতে আসলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।"

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পিক আপ ভ্যান চালক এবং ব্যবসায়ীরা জানান, গভীর রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক চলাচলের  জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

ডাকাতরা মূলত পিকআপ ভ্যানকে টার্গেট করে। কারণ তারা জানে যে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করে বিপুল নগদ অর্থ নিয়ে বাড়ী ফিরছে।

রাতে মহাসড়কে সতর্কতা বাড়ানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানান তারা।