ন্যাভিগেশন মেনু

যুদ্ধাপরাধ মামলার আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী গ্রেপ্তার


মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ৪২তম রায় ঘোষণার আগে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ এফ এম ফয়জুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালের গেটে এসে নিজেকে এই মামলার প্রধান আসামি দাবি করে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে চাইলে তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হলে ট্রাইব্যুনালের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধ মামলার আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী এএফএম ফয়জুল্লাহ (৭০) ওরফে আবুল ফালাহকে ময়মনসিংহের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহবাগ থানাকে তার পরিচয় নিশ্চিত করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

ফাইজুল্লাহ গফরগাঁও উপজেলার সাধুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ খানের ছেলে।

শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ট্রাইব্যুনালে আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি  নিশ্চিত করেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ।

২০১৪ সালে ফাইজুল্লাহর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়েরের পর থেকে সে পলাতক ছিলো।

গত বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফাইজুল্লাহর মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ফাইজুল্লাহসহ গফরগাঁও উপজেলার ৮ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফাইজুলাহসহ তিনজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও অপর পাঁচজনকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার।

পাগলা থানা পুলিশ, এলাকাবাসী ও মামলার বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফাইজুল্লাহর পিতা মজিদ খান ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান নেজামে ইসলামী পাটির সক্রিয় কর্মী হিসেবে স্থানীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলো। ফাইজুল্লাহ পিতার আদর্শ অনুসরণ করে নেজামে ইসলামীর কর্মী হিসেবে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত হয়। সে তার সশস্ত্র রাজাকার সহযোগী আব্দুর রাজ্জাক, সামসুজ্জামান (কালাম), আব্দুল খালেক, বাদশা, খলিলুর রহমান মীর গংদের নেতৃত্ব দিয়ে গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারি, টাংগাব, দত্তেরবাজার ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে এ সব ঘটনায় ফাইজুল্লাহর বিরুদ্ধে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে গফরগাঁও থানায় ৮টি মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর তারিখে ফাইজুল্লাহকে এসব মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ফাইজুল্লাহ ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় বসবাস শুরু করে এবং সাপ্তাহিক জয়যাত্রা, দৈনিক নয়াদিগন্ত ও দৈনিক শক্তি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করে।

২০১৪ সালে সাধুয়া গ্রামের মরহুম আফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে তার নামে মানবতাবিরোধী মামলার দায়ের করেন। এই মামলা দায়েরের পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের প্রাপ্ত তালিকায় নিগুয়ারি ইউনিয়নের তালিকায় ফাইজুল্লাহর নাম ২৫৪ নং ক্রমিকে ছিল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পাগলা থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ফাইজুল্লাহকে গ্রেফতার করে ময়মনসিংহ জেলা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ এফ এম ফয়জুল্লাহ এত দিন পলাতক ছিলেন। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করতে চাইলে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর গফরগাঁও পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহবাগ থানাকে তার পরিচয় নিশ্চিত করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এডিবি/