ন্যাভিগেশন মেনু

সাতক্ষীরায় সিরিজ বোমা হামলায় ১৭ জনের সাজা


সাতক্ষীরা শহরের পাঁচটি স্থানে জেএমবির সিরিজ বোমা হামলায় পুলিশের দায়েরকৃত ছয়টি মামলার একটি মামলায় ১৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। এ মামলার ১৯ আসামির মধ্যে ৮ জনকে পৃথক মামলায় সর্বোচ্চ ১৩ বছর ও ৯ জনকে ৯ বছর কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। অপর এক আসামি আগেই মারা যান।

বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শরিফুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।

সাতক্ষীরা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশের করা ছয়টি মামলার মধ্যে পাঁচটি মামলায় ১৪ আসামিকে সর্বোচ্চ ১৩ বছর ও সর্বনিম্ন ৩ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এসব মামলায় মোট ১৬ আসামির মধ্যে একজন মারা গেছেন এবং একজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ আসামিকে ১৩ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে বাকি ১০ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অপর একটি মামলায় ১৯ আসামির সবাইকে খালাস দেয়া হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন - মনিরুজ্জামান, নুর আলী, গিয়াস উদ্দিন মুন্না, ইসমাইল ওরফে হাবিবুর রহমান, বেল্লাল হোসেন ওরফে আব্দুল্লাহ, মোন্তাজ ওরফে মমতাজ, মাহবুবুর রহমান, রাকিব হাসান, নাইম, ফকর উদ্দিন, আসাদুজ্জামান, মনোয়ার হোসেন, আসাদুর ও আনিসুর রহমান খোকন।

খালাস পেয়েছেন - আবুল খায়ের। এছাড়া মৃত্যুবরণ করেছেন নাসির উদ্দিন দফাদার।

সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ জানান, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। এরমধ্যে সাতক্ষীরা শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক, জেলা জজ আদালত চত্ত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্ত্বর, বাস টার্মিনাল ও খুলনা মোড়সহ পাঁচটি স্থানে একযোগে এই বোমা হামলা ও নিষিদ্ধ লিফলেট ছড়ায়।

ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বোমা হামলাকারী শহরতলীর বাঁকালের দলিল উদ্দিন দফাদারের ছেলে নাসিরুদ্দিন দফাদার প্রত্যক্ষদর্শী বাকাল ইসলামপুর চরের পকেটমার রওশানের বিবরণমতে ধরা পড়ে।

তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি, সাতক্ষীরার রসুলপুরে জেএমবির ঘাঁটি চিহ্নিত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ২০০৫ সালে পাঁচটি মামলা করে।

পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সাতক্ষীরা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোহাম্মদ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেন।

এসব মামলায় কমপক্ষে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে ঢাকায় জেআইসিতে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) এ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃত মনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ২০১১ সালের জুনে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে পালিয়ে যান।

এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া সব আসামি সাতক্ষীরার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবনন্দি দেন।

২০১১ সালের জুন মাসে আনিসুর রহমান খোকন জামিন পেলেও পরে তার জামিন বাতিল করা হয়। তিনি পরে আবারও জামিন পান।

২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বাঁকাল ইসলামসপুরের নাসিরুদ্দিন দফাদার মস্তিস্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে সাতক্ষীরা কারাগারে মারা যান।

আসামিরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করায় মামলার রায় হতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লেগে যায়।

আসামিদের মধ্যে - শায়খ রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে এসব মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।

২০০৬ সালের ১৩ মার্চ সিআইডি সবগুলো মামলায় ১৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়।

২০০৭ সালে দায়েরকৃত মামলাটিতে ২৩ জনের নাম উলেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

মামলাগুলি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয়। যথাসময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৭ সালের ২৫ জুন মামলাগুলো খুলনা থেকে ফেরত আসে সাতক্ষীরায়।

২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে মামলাগুলির বিচার কাজ শুরু করেন।

পুলিশের প্রথম দায়েরকৃত পাঁচটি মামলার প্রত্যেকটিতে ১৯ জন করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

ইতোমধ্যে প্রথম পাঁচটি মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হলেও মঙ্গলবার সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলার (এসটিসি ১২০/৮) যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ছিল।

প্রথম পাঁচটি মামলার রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হলেও একইসাথে ছয়টি মামলার রায়ের জন্য বুধবার দিন ধার্য করা হয়।

মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে মাহাবুবর রহমান, সাইফুল ইসলাম, ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিন, বিলাল হোসেন ওরফে আব্দুলাহ, হাবিবুর রহমান ওরফে ইসমাইল, মনিরুজ্জামান মুন্না, সাইফুল ওরফে আসাদুজ্জামান ওরফে হাজারী ওরফে সাঈদ, খালিদ হোসেন ওরফে মিন্টু ও শামীম হোসেন ওরফে গালিবকে আদালতে আনা হয়। জামিনে থেকে আদালতে হাজিরা দেন ওবায়দুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম, আনিসুর রহমান ওরফে ইসমাইল, আলমগীর হোসেন, আব্দুল আহাদ, আশরাফ আলী ও মামুন।

তবে যুক্তিতর্ক শেষে জামিনে থাকা আটজনের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও বার্ধক্যজনিত ও অসুস্থতার কারণে সদরের খড়িবিলার মমতাজ উদ্দিন ও আশাশুনির কুল্যার নূর আলী মেম্বরের জামিন বাতিল করা হয়নি।

এ মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি সদর উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের ফখরুদ্দিন রাজি, সাতক্ষীরা সদরের সাতানির আবুল খায়ের, কলারোয়ার পাটুলি গ্রামের নাঈমুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে মনোয়র হোসেন উজ্জ্বল জামিন পেয়ে পলাতক রয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদ। কয়েকজন আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবু বক্কর ছিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট আজিবর রহমান।

< সাতক্ষীরায় সিরিজ বোমা হামলা মামলার রায় ১০ ফেব্রুয়ারি

এমআর/ ওয়াই এ/ এডিবি