ন্যাভিগেশন মেনু

সিদ্ধিরগঞ্জে ফের করোনা হাসপাতাল খোলার দাবি


সংক্রমণের শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জে দাপুটে ছিল করোনাভাইরাস। সব জেলার মধ্যে নারায়ণগঞ্জে করোনা শনাক্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। এমনকি দেশব্যাপী প্রথম করোনা রোগীও শনাক্ত হয় নারায়ণগঞ্জে। গতবছর সংকটাপন্ন ওই পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাজেদা হাসপাতাল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষে হাসপাতালটিতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সারাদেশে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু হচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জে এ মূহুর্তে করোনা হাসপাতাল না থাকায় উৎকন্ঠায় রয়েছে এলাকাবাসী। বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও করোনা হাসপাতাল খুলতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দানি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন। ২০২০ সালের মে মাসে কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছিলেন। সাজেদা হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন।

তিনি জানান, দেশব্যাপী করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণের শুরুতে অনেক রোগী সাজেদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ মূহুর্তে আমাদের এলাকায় কেউ কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিবে? তাছাড়া বেশিরভাগ হাসপাতালে বেড খালি নেই শুনছি। এজন্য আমাদের এলাকায় (সিদ্ধিরগঞ্জে) করোনা হাসপাতাল প্রয়োজন।

সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকার সুরুভি আক্তার গত বছর জুন মাসে কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়ে ১৭ দিন সাজেদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন।

এ হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি জানান, দিন দিন করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে। এ সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জে করোনা হাসপাতাল চালু থাকা দরকার ছিল। আমি সংশ্লিষ্টদের অনেুরোধ করবো শীঘ্রই যাতে করোনা হাসপাতাল খোলা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানান, সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ করোনা রোগী সাজেদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আবারও সংক্রমণ বাড়ছে। এ মূহুর্তে নারায়ণগঞ্জে করোনা হাসপাতাল খোলা প্রয়োজন।

এদিকে গত ৮ এপ্রিল দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে মেয়র ও সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ করে করোনা হাসপাতাল খুুলে দেওয়ার বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর (সংরক্ষিত ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) আয়েশা আক্তার দিনা। মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়।

স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘মাননীয় মেয়র মহোদয় আইভি আপা, মাননীয় ৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান শামীম ভাই, মাননীয় ৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান সাহেব আপনারা প্লিজ কাঁচপুরের সাজেদা হাসপাতালটি চালু করার ব্যবস্থা করুন। নারায়ণগঞ্জে করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে। আমার ঘরেও করোনা রুগী। আমার স্বামীর করোনা পজিটিভ। এর মধ্যে সকালে ফোন আসলো এক পরিচিত ছোট বোন করেনায় আক্রান্ত হয়ে এখন অবস্থা খারাপ কত হাসপাতালে ভর্তি করার চেস্টা করছি কোথাও সিট খালি নাই। আমরা সবাই করোনার কাছে অসহায় হয়ে গেছি। আমার পুরা পরিবার আইসোলেশনে আছি ঘর থেকে বের হতে পারছিনা। আজ আমার ঘরে করোনা আসাতে হাড়ে হাড়ে বুঝতাছি যেই ঘরে করোনা আসে সেই ঘরের সদস্যরা কতটা অসহায় হয়ে পরে। মরে গেলেও কেউ আসেনা সাহস দিতে। প্লিজ আপনারা তিনজন নারায়ণগঞ্জ এর জনগন এর অভিভাবক আপনারা তিনজন সাজেদা হাসপাতালটি চালু করার ব্যবস্থাসহ আইসিইউ, অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করেন, প্লিজ।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, এ মূহুর্তে সিদ্ধিরগঞ্জে করোনা হাসপাতাল খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হবে। এজন্য সবার স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালের মধ্যকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গত  ৩১ ডিসেম্বর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এ হাসপাতালে  কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগের ৩৯টি জেলার ৯৮৩ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩১ জন রোগী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) সেবা নিয়েছেন।

এমএইচএস/এডিবি/