ন্যাভিগেশন মেনু

১৯৪৪ সালে দেবিকা রানির ‘জোয়ার ভাটা’য় হাতেখড়ি দিলীপ কুমারের


বুধবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। তাঁর মৃত্যুতে (৯৮) গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা  শোক বার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। 

এদিন সকাল ৮টা নাগাদ দিলীপ কুমারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে বলিউড। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই শোকাবার্তা জ্ঞাপন করেছেন।অভিনেতা অক্ষয় কুমার শোক প্রকাশ করে লেখেন, 'বিশ্বের কাছে বাকিরা হিরো হলেও, আমাদের মতো অভিনেতাদের কাছে তিনিই নায়ক ছিলেন। 

ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটা যুগকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। ওঁ শান্তি।'দিলীপ কুমারের সঙ্গে একটি মুহূর্তের ছবি শেয়ার করে অজয় দেবগণ লেখেন, 'লেজেন্ড অভিনেতার সঙ্গে অনেক মুহূর্ত কাটিয়েছি কিছু ব্যক্তিগত, কিছু মঞ্চে। কিন্তু ওঁনার প্রয়াণের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। একটা প্রতিষ্ঠান, কালজয়ী অভিনেতা।

আমার গভীর সমবেদনা সাইরাজির প্রতি।'দিলীপ কুমারের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন পরিচালক মনোজ বাজপেয়ী, মধুর ভান্ডারকর, সুভাষ ঘাইসহ অন্যান্যরাও। 

বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে পাকিস্তানের পেশোয়ারের বাড়ি ছেড়ে মুম্বইতে পাড়ি দিয়েছিলেন দিলীপ কুমার।১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পেশোয়ারের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মহম্মদ ইউসুফ খান নামে জন্মগ্রহণ করেন দিলীপ কুমার। অভিনেত্রী দেবিকা রানীর হাত ধরে প্রথম ছবির আগে আগে নাম পরিবর্তন করেন দিলীপ কুমার। প্রশ্ন, মহম্মদ ইউসুফ খান কেন হিন্দু নাম নিয়ে দিলীপ কুমার হয়েছিলেন? দু’টি কারণ শোনা যায় এই নাম ও পদবি বদলের পিছনে। একটি ভয়, একটি প্রেম। তবে আরও একটি কারণ ছিল বলে মনে করা হয়। যেটি অবশ্য দিলীপ কুমার কখনও নিজের মুখে স্বীকার করেননি। যদিও তৃতীয় কারণটিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ের আলোচনায়। 

বলা হয়, হিন্দু দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার জন্যই এই নামবদল। বাস্তবের ইউসুফকে বলিউড চিনতে পারে ভারত স্বাধীনতার বছর ১৯৪৭ সালে ‘জগনু’ ছবিতে অভিনয়ের পরে। তবে তার অনেক আগেই ১৯৪৪ সালে প্রথম ছবি। 

সেই ‘জোয়ার ভাটা’ ছবির প্রযোজক ছিলেন দেবিকা রানি। দেবিকাই নাকি, ইউসুফ খানকে ‘দিলীপ কুমার’ নাম নিতে বলেছিলেন। তাই অভিনেতা জীবনের শুরু থেকেই তিনি নতুন নামে পরিচিতি পেতে থাকেন। তবে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ইউসুফ অভিনয় শুরু করার পরে বাবা যাতে জানতে না পারেন তার জন্য নাম বদলেছিলেন বলেও শোনা যায়। 

এমনটা নাকি কোনও একটি সাক্ষাৎকারে নিজেই বলেছিলেন দিলীপ। তবে দেবিকা রানির ইচ্ছার কথাই লিখে গিয়েছেন দিলীপ। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভি শোক জ্ঞাপন করে লেখেন,দিলীপ কুমারের চিরবিদায় দেখে খুবই দুঃখিত। 

একজন দক্ষ অভিনেতা ছাড়াও অমায়িক ও মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।' পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুংখাওয়া প্রদেশের সরকারের তরফে শোকবার্তা জ্ঞাপন করা হয়েছে। 

সেখানের এক মুখপাত্র জানান, 'প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা দিলীপ কুমার বরাবর তাঁর জন্মস্থান পেশোয়ারের বাসিন্দাদের সমাদর করতেন।' ইতিমধ্যেই সেখানে অবস্থিত দিলীপ কুমারের বাড়ি ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণা করেছে পাক সরকার। সেখানে মিউজিয়াম গড়ারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। 

আজ বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে দিলীপ কুমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সায়রা বানু’র সঙ্গে বিয়ের ১৬ বছর পর গোপনে দিলীপ কুমার পাকিস্তানি যুবতীকে বিয়ে করেছিলেন। 

অবশ্য বি-টাউনে একসময় দিলীপ কুমার ও সায়রা বানুর প্রেম বেশ চর্চিত ছিল। তবে প্রথম জীবনে অভিনেত্রী কামিনী কৌশলের প্রেমে পড়েন দিলীপ কুমার। সে প্রেম পরিণতি পায়নি। পরবর্তীকালে মধুবালার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অভিনেতা। কিন্তু তাঁদের পরিবার সে সম্পর্কের বিরুদ্ধে ছিল। 

মধুবালার সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পর ১৯৬৬ সালে ২২ বছরের ছোট অভিনেত্রী সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গেই ছিলেন দিলীপ কুমার। বলিউডের দিলীপ কুমার ও সায়রা বানুর জুটি অন্যতম আদর্শ বলে মানা হয়। সায়রা বানুর সঙ্গে বিয়ের ১৬ বছর পর ১৯৮০ সালে গোপনে পাকিস্তানি সুন্দরী আসমা রেহমানকে বিয়ে করেছিলেম দিলীপ কুমার। সায়রা বানুকে ছেড়ে আসমার সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন তিনি। 

এমনকি দিলীপ কুমার আসমাকে নিজের পালি হিলের বাংলোতে ও নিয়ে যান। এমন খবরে আঘাত পেয়েছিলেন সায়রা।তিনি আসমাকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠাতে বলেন। তবে আসমা রেহমানের সঙ্গে দিলীপ কুমারের এই বিয়ে স্থায়ী হয়নি। আসমার ব্যবহারে বিরক্ত দিলীপ কুমার ১৮৮২ সালে তাকে তালাক দেন এবং সায়রা বানুর কাছেই ফিরে যান। 

তাঁদের ১৬ বছর বিবাহিত জীবনে কোনও সন্তান ছিল না। শোনা যায়, ১৯৭২ সালে সায়রা বানু অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন। সেসময় দিলীপ কুমার চেয়েছিলেন, এই পরিস্থিতি সায়রা বানু কাজ বন্ধু রাখুন। তবে অভিনেত্রী তা মানেননি, তিনি পূর্ব প্রতিশ্রুতি মত কাজ শেষ করতে চেয়েছিলেন। 

তবে সায়রা বানুর যখন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন তাঁর গর্ভপাত হয়। তারপর আর মা হতে পারেননি অভিনেত্রী। আর সেকারণেই সন্তান লাভের আকাঙ্খায় আসমা রেহমানকে বিয়ে করেছিলেন দিলীপ  কুমার। তবে আসমাকে বিয়ে নিজের জীবনের বড় ভুল বলে অভিহীত করেছিলেন অভিনেতা।

১৯২২ সালে অবিভক্ত ভারতের কিসসা খাওয়ানি বাজারের ব্যবসায়ী লালা গোলাম সারওয়ার খান ও আয়েশা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন বলিউডের এই প্রবাদপ্রতীম অভিনেতা। জন্মসূত্রে তার নাম মুহাম্মদ ইউসুফ খান হলেও রুপালি পর্দায় তিনি পরিচিত ছিলেন দিলীপ কুমার হিসেবে। 

অভিনেতা দিলীপ কুমারের বলিউডে আত্মপ্রকাশ ১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার ভাটা’ সিনেমার মাধ্যমে। তবে, নায়ক হিসেবে তাকে পরিচিতি দেয় ১৯৪৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জুগনু’ চলচ্চিত্র। ছয় দশকের অধিক সময় ধরে বিচরণ করেছেন এবং অভিনয় করেছেন ৬০টির বেশি ছায়াছবিতে।

এস এস