ন্যাভিগেশন মেনু

৮০ তে কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র


দেশীয় চলচ্চিত্রের  জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। নায়ক চরিত্রে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি সিনিয়র চরিত্রে এসেও তিনি আলো ছড়িয়েছেন সমানভাবে। থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে সংস্কৃতির ভুবনে আসেন প্রবীর মিত্র। ‘লালকুটি’ থিয়েটারে কাজ করেছেন অনেক দিন। এরপর পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। প্রবীর মিত্রের প্রথম সিনেমার নাম ‘জলছবি’।

চলচ্চিত্রের গুণী এই অভিনেতা জীবন চলার পথে আজ ৮০ বছরে পা রাখলেন। ১৯৪০ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তবে তার বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে। এরপর স্নাতক সম্পন্ন করেছেন জগন্নাথ কলেজ থেকে।

কয়েক বছর ধরে অস্টিওপরোসিস রোগে আক্রান্ত তিনি। রাজধানীর সেগুনবাগিচাতেই বাসায় শুয়ে-বসে চার দেয়ালে বন্দি অবস্থায় দিন কাটছে তার।

২০০০ সালে হারিয়েছেন সহধর্মিণী অজন্তা মিত্রকে। ২০১২ সালে মারা যায় ছোট ছেলে আকাশ। ২০২১’র শুরুতে মারা যায় তার সবচেয়ে প্রিয় স্কুল জীবনের বন্ধু অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। প্রবীর মিত্র বলেন, খুব ইচ্ছে ছিল খোকনের (এটিএম শামসুজ্জামানের ডাক নাম) সঙ্গে আড্ডা দেবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হলো না। আমার আগেই আমার বন্ধু চলে গেল। খুব কষ্ট পেয়েছি। কত যে স্মৃতি খোকনের সঙ্গে তার কোন হিসেবে নেই। পুরান ঢাকার মানুষ আমরা। সুখে-দুঃখে একসঙ্গে আমাদের যে কত সময় কেটেছে তার কোন হিসেবে নেই।

আজ জীবনের এই সময়ে এসে কত কিছু যে মনে পড়ে। কত জনকে যে দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পারি না। সত্যি বলতে কী কেউই এখন আর ফোন করে না, খোঁজও নেয় না। মানুষের জীবনের শেষ সময়টুকু বুঝি এমনই, চাইলেই কোথাও যাওয়া যাবে না, কারও সঙ্গে দেখাও করা যাবে না। খুব খারাপ লাগে, কষ্ট হয়।

ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রবীর মিত্র। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’-এর মতো সিনেমায় তিনি ছিলেন নায়ক। এছাড়া ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমাতেও তিনি ছিলেন মূখ্য চরিত্রে। এরপর ধীরে ধীরে প্রবীর মিত্র মনোযোগী হন চরিত্রভিত্তিক অভিনয়ে।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সীমার’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘অঙ্গার’, ‘পুত্রবধূ’, ‘নয়নের আলো’, ‘জয় পরাজয়’, ‘চাষীর মেয়ে’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘আবদার’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান’, ‘দেহরক্ষী’, ‘অনেক সাধনার পরে’, ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘মাই নেম ইজ সুলতান’, ‘জিদ্দি বউ’, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’, ‘বস নাম্বার ওয়ান’, ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ ইত্যাদি।

নান্দনিক অভিনয়ের জন্য বরাবরই প্রশংসিত প্রবীর মিত্র। কিন্তু দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার পুরস্কার ভাগ্য প্রসন্ন নয়। কেবল ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।

ওআ/