ন্যাভিগেশন মেনু

‘অবাঞ্ছিত’ শরীফ শাহাব উদ্দিনকে বাংলাদেশ পোস্ট থেকে অব্যাহতি


বাংলাদেশ পোস্ট পত্রিকায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষিত পত্রিকাটির সম্পাদক (অফিসিয়ালি প্রধান সম্পাদক) শরীফ শাহাব উদ্দিনকে ইংরেজি এই জাতীয় দৈনিক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

 দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রæপ সিকদার গ্রæপের মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ পোস্ট’ পত্রিকা থেকে শরীফ শাহাব উদ্দিনকে অব্যাহতি দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শনিবার (১১/১১/২০২৩) অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে। সিকদার গ্রæপের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পোস্ট সাংবাদিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের মধ্যকার এই বৈঠক রাজধানীর বনানীতে সিকদার গ্রæপের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে শরীফ শাহাব উদ্দিনের ব্যাপক অনিয়ম, অপেশাদার ও অসাংবাদিকতা-সূলভ ব্যবহার এবং অসদাচরণের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় বলা হয়, শরীফ শাহাব উদ্দিন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, এবং অপেশাদার আচরণের সাথে সম্পৃক্ত। এতে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকাটির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। এমতবস্থায় পত্রিকার বৃহত্তর স্বার্থে তাকে অব্যাহতি দেওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, পত্রিকাটিতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি (জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি) এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সবাইকে পত্রিকা সংক্রান্ত কোন বিষয়ে শরীফ শাহাব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ না রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এএসএম এ খালেককে অতি শীঘ্রই অতিরিক্ত কার্য ও দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পোস্ট পত্রিকায় কর্মরত সকল সাংবাদিক ও কর্মচারী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান এবং শরীফ শাহাব উদ্দিন দ্রুত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পোস্টের প্রকাশক রিক হক সিকদার এবং সিকদার গ্রুপের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোস্ট সাংবাদিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক এবং ইংরেজি এই জাতীয় দৈনিকের ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক দুর্জয় রায় বলেন, পত্রিকাটির অফুরন্ত সম্ভাবনাকে মেলে ধরতে শরীফ শাহাব উদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়ার কোন বিকল্প ছিলনা। পত্রিকাটির মালিক পক্ষ যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, অযোগ্যতা আর অপেশাদারিত্ব মুক্ত রেখে বাংলাদেশ পোস্ট পত্রিকার অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে এখন আমরা নবউদ্যম নিয়ে কাজ করবো। এই পত্রিকাকে একটি স্মার্ট ও আধুনিক পত্রিকা হিসেবে গড়ে তোলতে আমরা বদ্ধ পরিকর।

ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এহসানুল হক জসীম বলেন, সাংবাদিকতা ও পেশাদারিত্বের জায়গা সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ পোস্টে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের সম্মিলিত দাবির প্রেক্ষিতে শরীফ শাহাব উদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন দাম্ভিক ও দুর্নীতিবাজ সম্পাদকের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের গণমাধ্যম জগতে একটি নজির স্থাপিত হলো। এই ঘটনা ‘স্টেয়ার ডিসাইসিস’ (ঝঃধৎব উবপরংরং) হয়ে থাকুক বাংলাদেশের মিডিয়া ইন্ড্রাস্টিতে।

তিনি আরো বলেন, “শরীফ শাহাব উদ্দিনকে অব্যাহতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পোস্টে নতুন যুগ শুরু হলো। একটা নতুন ইতিহাস তৈরি হলো। আশা করি, এই ইতিহাস থেকে সবাই শিক্ষা নিবেন। ক্ষমতা হাতে পেয়ে কেউ জালেম সম্পাদক হওয়ার চেষ্টা করবেন না, প্লিজ। নইলে এমন ভয়াবহ পরিণাম আপনাদের জন্যও অপেক্ষা করছে।”

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-সহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক নেতা-নেত্রী এবং অন্যান্য সাধারণ সাংবাদিক যারা এই ইস্যুতে পর্দার আড়াল থেকে অদম্য সাহস এবং শক্তি যুগিয়েছেন, তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এহসানুল হক জসীম।

উল্লেখ্য, গত মাসের শুরুর দিকে শরীফ শাহাব উদ্দিন পত্রিকার সাংবাদিক-কর্মচারীদেরকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে এবং সহকর্মী সাংবাদিকদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে গোপনে দেশত্যাগ করেন। এরপর  ১৬ অক্টোবর তারিখে দৈনিকটির সাংবাদিক ও কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ পোস্ট সাংবাদিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ সভা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে শরীফ শাহাব উদ্দিনকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে।

বিগত ১৭ অক্টোবর তারিখে পত্রিকার বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক-কর্মচারীরা সম্পাদকের কক্ষটি তালাবদ্ধ করে দেয়। এরপর পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইন থেকে ‘প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহাব উদ্দিন’ ফেলে দেওয়া হয়। 

গত ৭ নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশ পোস্ট পত্রিকার প্রথম পাতায় শরীফ শাহাব উদ্দিনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার সংবাদ ছাপিয়ে দেয় পত্রিকাটিতে কর্মরত সাংবাদিকেরা।