২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পাকিস্তানের সংসদে ‘চীন-পাক অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা, সহযোগিতামূলক ও পারস্পরিক কল্যাণের নতুন যাত্রা সৃষ্টি’ নামক এক গুরুত্বপূর্ন ভাষণ রেখেছেন। তা দু’দেশের সম্পর্ককে সার্বক্ষণিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করেছে। গত ৭ বছরে চীন–পাক অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ করে সার্বিক ও বহু খাতের সহযোগিতার মাধ্যমে দু’দেশের সার্বক্ষণিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠতর ও জোরদার এবং দু’দেশের অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি আরো গভীরতর করেছে চীন ও পাকিস্তান।
‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগ নির্মাণে পাকিস্তানের অংশ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ পাইলট প্রকল্প হিসেবে চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোরের নির্মাণকাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে। পাক প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শাহবাজ শরীফ সম্প্রতি সিএমজিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানান, এ প্রকল্পের নির্মাণে ইতিবাচক অগ্রগতি ও অসাধারণ সুফলাফল অর্জিত হয়েছে। তাতে দু’দেশের পারস্পারিক কল্যাণ বাস্তবায়িত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর হচ্ছে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগ নির্মাণে পাকিস্তানের অংশ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ পাইলট প্রকল্প। তার প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ আমাদের জরুরি চাহিদাকে পূরণ করেছে। যেমন: জ্বালানি, ও সড়কের অবকাঠামো। পাক জনগণ এ প্রকল্প থেকে অনেক লাভবান হয়েছে। তা গোটা অঞ্চলের জন্য অসাধারণ অবদান রাখবে’।
চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোরের আওতায় মুতিয়ারি-লাহুর এইচভিডিসি ট্রান্সমিশন প্রকল্প ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। তা দেশের বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন সক্ষমতাকে অনেক বাড়িয়েছে। মীর আরসালান আলী হচ্ছেন এ প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী। তিনি মনে করেন, এ প্রকল্পের চালু হচ্ছে পাকিস্তানের বিদ্যুত সরবরাহে নতুন যুগ শুরুর প্রতীক। তিনি বলেন, ‘তা হচ্ছে পাক বিদ্যুত সরবরাহ লাইনের প্রথম অগ্রগামী প্রকল্প। তাতে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত বিদ্যুত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। তা পাকিস্তানের প্রযুক্তি ও বিদ্যুত ব্যবস্থাপনার মানকেও অনেক উন্নত করেছে’।
দেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সাহিওয়াল বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোরের আওতায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি প্রকল্প। তা শুধু স্থানীয় বিদ্যুত সংকট দূর করেছে এমন নয়, বরং স্থানীয় অধিবাসীদের বড় পরিমানে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করেছে। এর তরুণ প্রকৌশলী আওয়াইস হায়দার বলেন, ‘এ প্রকল্প নির্মাণের সময় স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য তিন হাজারের বেশি প্রযুক্তিগত ও অ-প্রযুক্তিগত খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আশেপাশের গ্রামের প্রায় ১,৫০০ জনেরও বেশি লোক এখন এখানে কাজ করছেন’।
চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোরের নির্মাণ ইতোমধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। কৃষিকে খুব গুরুত্ব দেয় পাকিস্তান। এজন্য পাকিস্তান চীনের সাথে কৃষি খাতের সহযোগিতা জোরদারে ইচ্ছুক। চীন-পাক মরিচ শিল্প সহযোগিতা প্রদর্শনী এলাকা হচ্ছে এ খাতে প্রথম বাস্তবায়িত সহযোগিতামূলক প্রকল্প। এর প্রযুক্তিবিদ মালিক সাজ্জাদ খারাল জানান, চীনা বিশেষজ্ঞদের প্রযুক্তি মরিচের ফলনের পরিমাণ বাড়িয়েছে এবং হাত ও যন্ত্রের কার্যক্রমকে অনেক সহজ করেছে।
ভবিষ্যতের চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোরের আওতায় সহযোগিতা প্রসঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা শিল্প এলাকা নির্মাণ করব। অর্থাত শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাব। চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর চীন ও পাকিস্তানের কল্যাণ বাড়াবে। তা আফগানিস্তান, ইরান ও উপসাগরীয় দেশসমূহের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে’। (সূত্র: সিএমজি)