ন্যাভিগেশন মেনু

চাটমোহরে ১৩ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা


চলতি মৌসুমে পাবনার চাটমোহর উপজেলায় ৩ মেট্রিকটন পেঁয়াজ বীজ ও ১৩ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছেন পেঁয়াজ চাষীরা।

বীজ উৎপাদনের জন্য কন্দ লাগানো পেঁয়াজ ক্ষেতগুলো এখন শুভ্র ফুলে ভরা। আগামী কিছুদিনের মধ্যে চাষীরা পেঁয়াজ ফুল থেকে বীজ সংগ্রহের কাজ শুরু করবেন।

চাটমোহর কৃষি অফিস সূত্র আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানায়, চলতি মৌসুমে চাটমোহরে ১ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৬১০ হেক্টর চারা পেঁয়াজ এবং ৫৭০ হেক্টর কন্দ পেঁয়াজ রয়েছে। এছাড়া বীজ উৎপাদনের জন্য ৮৫ জন কৃষক ৩০ বিঘা জমিতে কন্দ পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। সম্প্রতি চারা পেয়াজ রোপনের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ কন্দ পেঁয়াজ জমি থেকে উত্তোলন করেছেন কৃষক। এ বছরের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের অনুকূলে থাকায় হেক্টর প্রতি প্রায় ১১ মেট্রিকটন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। সে হিসেবে ১২ হাজার ৯৮০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে চাটমোহরে।

পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী কৃষক হিসেবে ইতোমধ্যে সফলতা দেখিয়েছেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামের (উত্তরপাড়া) কৃষক হায়দার আলী। গত ১৮ বছর যাবৎ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে আসছেন তিনি। চলতি মৌসুমেও তিনি ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছেন।

কৃষক হায়দার আলী জানান, জমিতে পেঁয়াজ কন্দ লাগানোর আগে ৮ বার চাষ দেওয়া হয়েছে। প্রতি চাষ ২০০ টাকা বিঘা হিসেবে ৩ বিঘা জমিতে ৮টি চাষ দিতে তার খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। জমি প্রস্তুতের সময় টিএসপি ও পটাশ সারসহ বালাইনাশক বাবদ খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা। ৩ বিঘা জমিতে ৮০০ কেজি পেঁয়াজ কন্দ লাগিয়েছেন তিনি। যার দাম প্রায় ২ হাজার ৮০০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৬০০ কেজি পেঁয়াজ কন্দ উপজেলা কৃষি অফিস তাকে সরবরাহ করেছে। লাগানো বাবদ ১৫ জন শ্রমিককে পারিশ্রমিক দিতে হয়েছে ৬ হাজার টাকা। জমিতে ৫ দফায় সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

এ ছাড়াও আগাছা উৎপাটন, পরিচর্যা, নিয়মিত বিভিন্ন রকমের বালাইনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে তাকে। সবমিলিয়ে ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। তিনি আশা করছেন, কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে ৩ বিঘা জমি থেকে ৩০০ কেজি পেঁয়াজ বীজ পাবেন তিনি। চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজের দাম ছিল ৫ হাজার  থেকে ৬ হাজার টাকা কেজি। আগামী মৌসুমে তিনি যদি ৫ হাজার টাকা কেজি পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করতে পারেন তাহলে ১৫ লাখ টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন তিনি।

হায়দার আলী আরও জানান, দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কেজি পেঁয়াজ বীজের স্বাভাবিক দাম। কোন কোন বছর বেশি দাম পেলে অধিক লাভবান হন তিনি। গত কয়েক বছরে দুইবার আশাতীত দাম পেয়েছেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রায়শই জমি পরিদর্শন করে বিভিন্ন পরামর্শ দেন বলেও জানান তিনি।

একই গ্রামের অপর পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী কৃষক জাইদুল ইসলাম জানান, ৬ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছেন তিনি। এ জমিতে কার্তিক মাসে ৭০ কেজি পেঁয়াজ কন্দ রোপণ করেছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। আশা করছেন এ জমি থেকে প্রায় ৩৫ কেজি পেঁয়াজ বীজ পাবেন তিনি। এটি একটি লাভজনক কৃষি বলে জানান তিনি।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ জানান, পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণে চলতি মৌসুমে চাটমোহরের ৭০০ কৃষককে ২৫০ গ্রাম করে প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজ ও ৩০ কেজি করে সার দেওয়া হয়েছে। চাটমোহরে সাধারণত তাহেরপুরী এবং কলসনগর জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের অনুকূলে থাকায় কন্দ পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজ বীজ চাষীরা ভাল ফলন পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কন্দ পেঁয়াজ উত্তোলনের কাজ চলছে। চারা পেঁয়াজ রোপন শেষ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে পেঁয়াজ বীজ সংগ্রহের কাজ শুরু হবে।

সিবি/এডিবি