‘জনগণের আস্থা অর্জনে পুলিশকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণের সেবার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
আজ রবিবার রাজশাহীর সারদায় ৩৬তম বিসিএস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই। আমি আশা করি আপনাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রূপক-২০২১' এবং 'রূপকল্প-২০৪১' বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন , জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে পুলিশ বাহিনীকে অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পদক ২০১১' এ ভূষিত করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পুলিশের নবীন কর্মকর্তারাও তাদের পূর্বসূরীদের ন্যায় দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও অসীম সাহসিকতার সঙ্গে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালের ৯ মে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম প্রশিক্ষণ সমাপণী কুচকাওয়াজ এ সারদায় অনুষ্ঠিত হয়। সেই কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু তাঁর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সর্বদাই এ দেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অপরাধের ধরণ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। গতানুগতিক অপরাধের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, মানবপাচার ইত্যাদি বৈশ্বিক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের মত অশুভ সামাজিক ব্যাধি। সমাজ থেকে এসব অপকর্ম নির্মূলে এবং সমসাময়িক সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে সবসময় সচেষ্ট থাকতে হবে।
জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অব্যাহত সাফল্য শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এদেশের মাটিতে কোনভাবেই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না।
প্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিভিন্ন সময় স্বার্থান্বেষী মহল যেভাবে গুজব রটিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার ব্যাপারে সব সময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, এসব গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের সরকার বিগত ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও জনমানুষের জীবনযাত্রার মানউন্নয়ন সেবা প্রাপ্তি সহজতর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বৈদেশিক নীতি ও সম্পর্ক, গ্রামীণ ও নগর অবকাঠামো, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক নিরাপত্তা-প্রতিটি সেক্টরেই আজ কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশেও আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। যোগাযোগ খাতে আমাদের যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
এছাড়া মেট্রোরেল এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে বলেও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমির হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন তিনি।
পরে পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে ট্রফি বিতরণ করেছেন।
এসময় সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপণী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক, পুলিশ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ, পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এস এ / এস এস
