ন্যাভিগেশন মেনু

জীবননগরে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ


চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সার বিক্রেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বিসিআইসি এবং বিএডিসি সার ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা না করে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। ন্যায্য মূল্যে সার না পেয়ে প্রতিনিয়ত বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছেনা কৃষকদের।

সোমবার (৩১ মে) বিকেলে জীবননগর উপজেলার মিনাজপুর বাজার, আন্দুলবাড়িয়া বাজার, রায়পুর বাজার, বাড়ান্দি বাজার ও সুটিয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সার ব্যবসায়ী সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে সার বিক্রি করছেন না। কোনো অপিরিচিত মানুষ সারের দোকানে টিএসপি সার কিনতে গেলে তাকে বলা হচ্ছে সার নেই। পরক্ষণেই পরিচিত কৃষক গেলে তাদের কাছে অধিক মূল্যে সার বিক্রি করা হচ্ছে।

রায়পুর বাজারে এবং বাড়ান্দি বাজারে সোমবার ১১০০ টাকা মূল্যের প্রতিবস্তা টিএসপি সার (মরক্কো) ১২৫০ টাকা এবং বাংলাদেশি টিএসপি ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে বিসিআইসি (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন) অনুমোদিত জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের জন্য ট্যাগ করা এমএস ট্রেডার্স, রায়পুর ইউনিয়নের জন্য রাসেল এন্টারপ্রাইজ এবং আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের জন্য হক ট্রেডার্সের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কৃষকরা যাতে সময়মতো জমিতে সার দিতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে সরকারের বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সারাদেশের ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সার বিপণনের কাজটি করে থাকেন। সরকারি নিয়ম মোতাবেক প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার নিয়োগ দেওয়া আছে। ওইসব ডিলারের স্ব স্ব ইউনিয়নেই ব্যবসা পরিচালনা করার শর্তে তাদের ডিলারশিপ দেওয়া হয়েছে। অথচ পৌরসভার মধ্যেই অধিকাংশ সার ব্যবাসয়ীদের গোডাউন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলা শহরের দত্তনগর সড়কের দুইপাশে একাধিক ইউনিয়নের সারের ডিলার রয়েছে। অথচ ওই ডিলারদের ইউনিয়নে গোডাউন রেখে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সার বিক্রির কথা রয়েছে।

কৃষকদের দাবি, ডিলাররা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য করছে।

এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, জীবননগরে সার ব্যবসায় কৃষি বিভাগের বিন্দুমাত্র তদারকি নেই। আর তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছে মতোই চালাচ্ছে নিজেদের ব্যবসা। সার ডিলারদের ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে চাষীদের কাছে সার বিক্রির নিয়ম থাকলেও বেশি দামে বিক্রির কারণে তা করছেন না ডিলাররা।

এছাড়া বিএডিসি ও বিসিআইসির ডিলারদের পাশাপাশি খুচরা সার ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত সারের খুচরা মূল্য তালিকা দোকানে টানিয়ে রেখে প্রকাশ্যে অধিক দামে সার বিক্রি করলেও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছে কৃষকদের পক্ষে কোন অভিযোগ-অনুযোগ কিংবা পর্যাপ্ত প্রমাণাদি নেই। প্রমাণস্বরূপ তারা দোকানের বিক্রি রশিদ বা প্রমাণপত্র চান। ডিলাররা যেখানে মূল্য তালিকা টানিয়ে রেখে প্রকাশ্যে বেশি দামে কৃষকদের সার কিনতে বাধ্য করছেন, সেখানে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করলেও রশিদে সরকারি দামের বাইরে অতিরিক্ত দাম উল্লেখ করার কথা না।

অভিযোগ রয়েছে, ক্রেতাদের কেউ রসিদ চাইলে তাদেরকে সরকার নির্ধারিত দাম উল্লেখ করেই রশিদ দেওয়া হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার কাছে সার বিক্রি করছেন না তারা। বলছেন, বরাদ্দের সার শেষ, এখন যা আছে বাইরে থেকে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে।

জীবননগর উপজেলার কৃষকরা তাদের জমিতে টিএসপি সার দিতে না পেরে কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

কৃষকদের অভিযোগ, সারের সংকট দেখিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের। ডিলারদের কাছে সার কিনতে গেলে তাদের বলা হচ্ছে সার নেই। অনেক ডিলার বলছেন, সার বেশি দামে কিনছি তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। কিন্তু নির্দিষ্ট দামে কৃষকরা সার কিনতে চাইলে বলা হচ্ছে সারের সংকট রয়েছে।

কৃষকরা আরও অভিযোগ করেন, সার ডিলারদের কাছে সরকারি দরে ক্যাশ মেমোসহ সার কিনতে গেলে টিএসপি সার নেই বলে জানিয়ে দেয়। আর বেশি দামে দিলেই পাওয়া যায় পর্যাপ্ত সার। আর সাধারণ চাষীদের কাছে মেমো ছাড়া বেশি দামে বিক্রি করছেন। ক্যাশ মেমো চাইলে কোনো ডিলার তা দিচ্ছেন না।

রায়পুর ইউনিয়নের বালিহুদা গ্রামের কৃষক রাজ্জাক আলী বলেন, আমাদের এলাকায় সারের কোনো ডিলার আছে কিনা আমার জানা নেই। আমরা শহরের গোডাউন থেকে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছি।

একই কথা জানালেন আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের কৃষক গোলাম রহমান। তিনি বলেন, আমরা দেশিয় টিএসপি সার প্রতি কেজি ৩৪ টাকা দরে কিনছি। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্য মাত্র ২৪ টাকা।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বেশি দামে সার বিক্রি করার অভিযোগ পেলে ওই সার ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে সার বিক্রি করার জন্য উপজেলার বিসিআইসি ও বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলারসহ খুচরা সার বিক্রেতাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন বলেন, কৃষকরা হলো দেশের প্রাণ। সার ব্যবসায়ীরা যদি কৃষকদের জিম্মি করে বেশি দামে সার বিক্রি করে থাকে তাহলে ওই দোকানদারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন থেকে নিয়মিত সারের বাজার মনিটরিং করা হবে। অধিক মূল্যে সার বিক্রিকারীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা করা হবে। কোনোভাবেই কৃষিখাতকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।

এসকে/এসএ/এডিবি/