ন্যাভিগেশন মেনু

জীবননগরে শাকবীজ উৎপাদন করে ভাগ্য ফিরেছে সহস্রাধিক কৃষকের


চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় শাকবীজ উৎপাদনে পাল্টে গেছে অনেক কৃষকের ভাগ্য। বদলে দিয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র। একসময় শুধু ইরি-বোরো ও আমন চাষের পাশাপাশি কিছু শাকসবজি চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কৃষিকাজ। কিন্তু এখন আধুনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের লালশাকের বীজ উৎপাদন করে কৃষকরা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।

ধানের জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে লালশাক বীজ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য এখানকার কৃষকদের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। কৃষকদের কাছে এখন শাকবীজ উৎপাদন ব্যাপক জনপ্রিয়। অল্পসময়ে স্বল্পপুঁজিতে অধিক লাভ করা যায় বলে প্রতিবছরই শাকবীজ উৎপাদনে মেতে উঠছেন এখানকার কৃষকরা। এ কারণে উপজেলায় শাক বীজ উৎপাদনে নিরব বিপ্লব ঘটেছে।

ফলে এ বছরও উপজেলার আব্দুলবাড়িয়া, দেহাটি, কাশিপুর, অনন্তপুর, নিশ্চিন্তপুর, পুরন্দপুর, বাঁকা ও মুক্তারপুর গ্রামে ১২০ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল নানা জাতের লালশাকের আবাদ করা হয়েছে এবং এর থেকে বীজ উৎপাদন করা হবে। 

উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমিতে লালশাকের এক নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় এবং মনে হয় এলাকার মাঠে কেউ সবুজের বুকে লাল এঁকে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের সফল শাকবীজ উৎপাদনকারী চাষী শুকুর আলী জানান, আজ থেকে ১৫ বছর আগে এ এলাকায় প্রথম তিনি শাকবীজ উৎপাদন শুরু করেন। ওই বছর তিনি এক বিঘা জমিতে এক হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদিত বীজ প্রায় ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ফলে অধিক পরিমান লাভ হওয়ায় পরের বছর তিনি জমির পরিমান আরও বাড়িয়ে দেন। এ বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে শাকের আবাদ করেছেন এবং তা থেকে তিনি বীজ উৎপাদন করবেন। ৫ বিঘা জমিতে উৎপাদিত বীজ তিনি দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

তিনি জানান, অগ্রহায়ণ মাসে ভালোভাবে জমি কর্তন ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমিকে শাক চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। জমিতে বীজ বপনের ১০ থেকে ১৫ দিনের মাথায় চারা গজায়। ৪ মাসের মাথায় জমি থেকে গাছ কেটে বীজ সংগ্রহ করা হয় এবং প্রতিবিঘা জমিতে ৬ থেকে ৮ মণ বীজ উৎপাদিত হয়। জমি তৈরি থেকে বীজ সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর উৎপাদিত বীজ বিক্রি হয়ে থাকে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে লাভ হয় ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা।

শুকুর আলী জানান, তার দেখাদেখি অনেক কৃষক সবজি চাষ করে তা থেকে বীজ উৎপাদন শুরু করেছেন। এভাবে ধীরে ধীরে তারা শাকবীজ উৎপাদনকে বেছে নিয়েছেন জীবিকার অবলম্বন হিসেবে।

ইতোমধ্যেই উপজেলার আব্দুলবাড়িয়া, দেহাটি, কাশিপুর, অনন্তপুর, নিশ্চিন্তপুর, পুরন্দপুর, বাঁকা ও মুক্তারপুর গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক কৃষক সবজিবীজ উৎপাদন করে বদলে নিয়েছেন নিজেদের ভাগ্য। 

কৃষকরা জানান, বর্তমানে সবজি ক্ষেতের উপযোগী জমির খাজনা বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও চাষের নানা উপকরণের দাম বাড়ায় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেশি হচ্ছে।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান, উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া এলাকার জমিগুলো সবজি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। এখানকার চাষীরা সবজি চাষের ব্যাপারে বেশ অভিজ্ঞও। এ কারণে এলাকার চাষীরা উন্নত কৃষি প্রযুক্তির আওতায় সবজি চাষে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন স্পন্দন এনেছেন।

এসকে/এডিবি/