ন্যাভিগেশন মেনু

ঢাকায় ‘বাংলাদেশ মাইক্রোবায়োলজি কাউন্সিল’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত

১৬০ বিজ্ঞানীর ভার্চুয়াল কনফারেন্স:


ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো ভয়ংকর অদৃশ্য শত্রুকে যথাযথভাবে মোকাবেলায় বিজ্ঞানভিত্তিক পলিসি তৈরীতে সরকারকে সহায়তার জন্য ‘বাংলাদেশ মাইক্রোবায়োলজি কাউন্সিল’ স্থাপনে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য অনুজীববিজ্ঞানীরা (মাইক্রোবায়োলজিস্ট) একমত পোষণ করেছেন।  গত ৯ মে (শনিবার) এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে ইউএসএ, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, কাতার এবং বাংলাদেশ থেকে ১৬০ জনের অধিক অনুজীববিজ্ঞানী অংশ নিয়ে দীর্ঘ ৪ ঘন্টাব্যাপি আলোচনা-পর্যালোচনার পর প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতা ঘুচাতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চলমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ এই জুম মিটিংয়ের বিস্তারিত তথ্য ১৮ মে সোমবার নিউইয়র্কে এ সংবাদদাতাকে জানান যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা নোভার্টিস ফার্মাসিউটিক্যালের বিজ্ঞানী ড. সুবর্ণা খান (Dr. Subarna Khan, Novartis Pharmaceuticals)।

উল্লেখ্য, এ মিটিংয়ের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞানী ড. সুবর্ণা খান। সঞ্চালনায় ছিলেন ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. পারভেজ আকতার (Dr. Parvis Akter, Faculty, VSU/JTCC)। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার ইমার্জিং প্যাথোজেন ইনস্টিটিউটের গবেষক ড.  মোহাম্মদ হারুন-অর রশিদ (Dr. Mohammed Harunur Rashid, Emerging Pathogens Institute, University of Florida) তার প্রতিষ্ঠানে ‘কভিড-১৯’ পরীক্ষার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের উদ্যোগে এই জুম মিটিং এর আয়োজন করা হয়। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বর্তমান ছাত্র , শিক্ষক, এলামনাই ও পেশাদার মাইক্রোবায়োলজিস্টদের একত্রিত করার উদ্দ্যেশ্যে এ আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশে কভিড-‌১৯ মোকাবেলায় নানা মত, নতুন আইডিয়া ও কর্মপরিকল্পনা। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হয়ে দীর্ঘ এ আলোচনায় মূলত: করোনার মতো ভয়ংকর রোগের দ্রুত সংক্রমণ নিয়ে খোলামেলা কথা হয় নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে।

আলোচনার প্রথম পর্বে ১৭ জন বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মত তুলে ধরেন। নানা লেভেলে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের করোনা মোকাবেলায় পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করা হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান  ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, শিক্ষক ড. আনোয়ারা বেগম, ড. সংগীতা রহমান, ড.মোজাম্মেল হক এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ড. ইকবাল কবির জাহিদ বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মাইক্রোবায়োলজি বিভাগসমূহের কাজ তুলে ধরেন। 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্টের সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ারা বেগম তার সংগঠনের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন। আইসিডিডিআরবি এর ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ড. মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান জানান কিভাবে কভিড-১৯ মোকাবেলায় মাইক্রোবায়োলজিস্টরা সাহায্য  করতে পারেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বায়োডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর গবেষক  ড. মাসমুদুর রহমান (Dr. Masmudur Rahman (Bio design Institute, Arizona State University, USA),  যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ট্যাক্ট জিনোমিকস, ইউএসএ এর গবেষক  ড. মোঃ নুরল ইসলাম (Dr. Md Nurul Islam , Intact Genomics, USA), যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাবোট ল্যাবোরেটরিজের গবেষক ড. খন্দকার আল জায়েদ সিদ্দিকি (Abbott Laboratories) ও ঢাকার ইনডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সরোয়ার হোসেন গবেষণা ও কোলাবরেশনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। 

তারা কভিড-১৯ এর মত ইনফেকশাস রোগসহ  কিভাবে নতুন নতুন ইনফেকশাস রোগ প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন। বেশ কয়েকজন এলামনাই  এডভোকেসি স্ট্র্যাটেজি  ও কলাবোরেশনের সুযোগের কথা তুলে ধরেন।  জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলা  বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাবি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক  ড. শাহনুর হোসেইন, আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজির গবেষক মুনতাসির আলম , ইউএসএইডের প্রজেক্ট ম্যানেজার সরদার তানজীর হোসেন (Sarder Tanzir Hossain, Senior TB Diagnostics Specialist with Infectious Diseases Detection and Surveillance (IDDS) Project under FHI 360, USAID),  বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি নাজিজা রহমান, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালসের মনোজিত রায় ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের গবেষক ড. হাসান জাকির (Dr. Hasan Zaki, University of Texas, Southwestern Medical Center)। করোনা সেন্টারের টেস্টিং ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করা বিকন ফার্মার রাইসুল ইসলাম তার অভিজ্ঞতার কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, বিভিন্ন এলাকা ও মেডিকেল কলেজ  থেকে স্যাম্পল কালেকশনের জন্য টেকনোলজিস্টদের তারা প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এসব স্বেচ্ছাসেবী নিঃস্বার্থভাবে জীবনের মায়া ত্যাগ করে এসব কাজ করছেন। এ সময়ে ঢাবিসহ  অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের করোনা মোকাবেলায় অবদানকে  স্বীকৃতি জানানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মাইক্রোবায়োলজিস্টদের এ স্বেচ্ছাসেবি কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্ট (বিএসএম) কে চিঠি দিয়েছে। 

উল্লেখ্য, এমন মহামারির সময়ে স্বেচ্ছাসেবার ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য  আরও অনেক মাইক্রোবায়োলজিস্ট এ কাজে নিযুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। 

মিটিং এ অংশগ্রহণকারীরা কভিড-১৯ মোকাবেলায় ও ভবিষ্যতের জনস্বাস্থ্য সংকটে একসাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। 

তবে অনেকে হতাশার সাথে উল্লেখ করেন যে, সরকার এখনো মাইক্রোবায়োলজিস্টদের যথেষ্ঠ স্বীকৃতি দিতে পিছিয়ে আছে। বৈজ্ঞানিক পলিসি তৈরিতে সরকারকে সহায়তা করার জন্য ও স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় যযথাযথ ভূমিকা পালনের নিমিত্তে অদূর  ভবিষ্যতে ‘বাংলাদেশ মাইক্রোবায়োলজি কাউন্সিল’ স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। 

কভিড মোকাবেলায় বিভিন্ন বায়োসেফটি ট্রেনিং মডিউল তৈরি, স্বেচ্ছাসেবীদের বায়োসেফটি প্রশিক্ষণ প্রদান করার সিদ্ধান্তও গৃহিত হয়। পাশাপাশি গার্মেন্টস, প্রশাসন, পুলিশ, সাংবাদিক ও কর্পোরেট হাউজগুলোকে সাধারণ পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনাও গুরুত্ব পায় এ সভায়। 

মিটিংটিকে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে অভিহিত করা যায়। যথাযথ মিশন, ভিশন, কর্মদক্ষতা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করা যাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়।

এডিবি/