ন্যাভিগেশন মেনু

দর্শকদের দুই নয়নের আলো হয়ে থাকবেন বুলবুল আহমেদ


বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়ক’ খ্যাত বুলবুল আহমেদ। যিনি তার দক্ষ অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন। আজও অমর হয়ে আছেন সিনেপ্রেমী দর্শকদের হৃদয়ে তিনি।

প্রখ্যাত এই অভিনেতার জন্মদিন আজ। ১৯৪০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন বুলবুল আহমেদ। তার আসল নাম তাবারক আহমেদ। বাবা-মা তাকে আদর করে বুলবুল বলে ডাকতেন। আর এই নামেই তিনি পরিচিত হন দেশজুড়ে।

ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। এরপর তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন বুলবুল আহমেদ।

চাকরির পাশাপাশিই অভিনয় শুরু করেন বুলবুল আহমেদ। টেলিভিশন নাটকে অভিনয় দিয়েই শুরু হয় তার অভিনয় জীবন। আবদুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় ‘বরফ গলা নদী’ নাটকে প্রথম অভিনয় করে বুলবুল। এরপর একে একে তিনি প্রায় চার শতাধিক নাটকে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- মালঞ্চ, ইডিয়েট, মাল্যদান, বড়দিদি, আরেক ফাল্গুন, শেষ বিকেলের মেয়ে।

বুলবুল আহমেদের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) ‘ইয়ে করে বিয়ে’ ছবির মাধ্যমে। এই ছবিতে তার অভিনয় আলোচিত হয়। যার ফলে পরের বছর আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘অঙ্গীকার’ ছবিতে অভিনয় করেন। এটিও দারুণ সাফল্য পায়।

ক্যারিয়ারে বুলবুল আহমেদ অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে ‘মহানায়ক’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্য্য কন্যা’, ধীরে বহে মেঘনা, জীবন নিয়ে জুয়া, রূপালী সৈকতে, বধূ বিদায়, জন্ম থেকে জ্বলছি, দি ফাদার উল্লেখযোগ্য। তবে বুলবুল আহমেদ বাংলা চলচ্চিত্র উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন যে’কটা ছবির জন্য, সেগুলো হলো ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘দেবদাস’ ও ‘মহানায়ক’। এই ছবিগুলো তাকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়।

শুধু অভিনয়ই নয়, চলচ্চিত্র পরিচালনা করেও সফল হন বুলবুল আহমেদ। তার পরিচালিত ‘ওয়াদা’, ‘মহানায়ক’, ‘ভালো মানুষ’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘আকর্ষণ’, ‘গরম হাওয়া’, ‘কত যে আপন’ ছবিগুলো আলোচিত হয়েছে।

অভিনয়ের জন্য বুলবুল আহমেদ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭৭ সালে ‘সীমানা পেরিয়ে’, ১৯৭৮ সালে ‘বধু বিদায়’, ১৯৮০ সালে ‘শেষ উত্তর’ ও ‘১৯৮৭ সালে ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

ব্যক্তিগত জীবনে বুলবুল আহমেদ বিয়ে করেছিলেন ডেইজি আহমেদকে। তাদের তিন সন্তান ঐন্দ্রিলা, তিলোত্তমা ও শুভ। এর মধ্যে ঐন্দ্রিলা আহমেদ অভিনেত্রী ও গায়িকা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন।

২০১০ সালের ১৪ জুলাই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বুলবুল আহমেদ। তার চলে যাওয়া ঢাকাই সিনেমার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত। তবে তিনি তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে দেশের সিনেমায় যে অবদান রেখেছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে বেঁচে থাকবে সিনেমার ইতিহাসে। আর বুলবুল আহমেদও থেকে যাবেন দর্শকদের মনের প্রিয় একটি ভালোবাসাময় অনুভূতি হয়ে।

ওআ/