ন্যাভিগেশন মেনু

বিপদেই বন্ধুর পরিচয়


করোনায় জবুথবু এবং প্রায় জনমানবশূন্য লং আইল্যান্ডের ওসেনসাইড এবং লিনব্রুকে সপ্তাহের ৭দিনই সকাল-সন্ধ্যা খোলা রেখে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়াচ্ছে ‘আরএলবি সেইফটি  অ্যান্ড হার্ডওয়্যার স্টোর’।

বাংলাদেশী মালিকানাধীন এই স্টোর দুটিতে মাস্ক, সেনিটাইজার, গ্লাভস এবং চিকিৎসক-নার্স-পুলিশ-ফায়ার সার্ভিস-ইলেকট্রিসিয়ান-ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান ছাড়াও কন্সট্রাকশন কাজের সময়ে বিশেষভাবে জরুরী বুট, শার্ট, ব্লেজার, ক্যাপ ইতাদি  হ্রাসকৃত মূল্যে বিক্রির মধ্যদিয়ে সর্বসাধারণকে করোনা-ভীতি থেকে সুরক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা পালন করছে। 

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দুটি স্টোরেই ন্যাশনাল সেইফটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পণ্য আমদানি ও বিক্রি হচ্ছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশী মানুষ আক্রান্ত এবং মারা গেছে নিউইয়র্ক স্টেটের নিউইয়র্ক সিটি এবং লং আইল্যান্ডে। এখনো অন্য সব এলাকার চেয়ে এ দুটি স্থানে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশী। 

এর ফলে অনেক স্টোরই বন্ধ। ‘বিশেষ জরুরী সামগ্রি’র স্টোরেও ( ফার্ম্মেসী, রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি-সামগ্রির সুপারমার্কেট, সেইফটি এ্যান্ড হার্ডওয়্যার ইত্যাদি) তালা ঝুলছে। সে সবের মালিক/ম্যানেজার হয় হাসপাতালে, নয়তোবা মারা গেছেন। 

এমন সময়েও শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত ওসেনসাইড এবং লিনব্রুকে আকতার হোসেন বাদলের স্টোর দুটি সবসময় খোলা রাখা হচ্ছে।

এ সময়ে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় সামগ্রি এখানে বিক্রি হওয়ায় অনেকেই ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তা ক্রয়ে সক্ষম হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার চাঁদপুরের সন্তান আকতার হোসেন বাদল বলেন, গ্রাহকের অধিকাংশই উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আসেন। অনেকের পকেটে অর্থ সংকট দেখলেই আমি ডিসকাউন্টে বিক্রি করি। 

আবার কাউকে কাউকে বিনামূল্যেও প্রদান করছি। কারণ, প্রায় সকলেই গৃহবন্দি এবং বেকার। অথচ মাস্ক, সেনিটাইজার লাগবেই। ব্যবসাতো সারাবছরই করেছি। এই সংকটে না হয় লাভের আশা ছেড়েই দিলাম। করোনার বিদায় ঘটলে এসব গ্রাহকেরাই ছুটে আসবেন বিপদের সময়ে তাদের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ করায়।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, করোনার তান্ডব রোধকল্পে অথবা সংক্রমণ ঠেকাতে ১৯ মার্চ থেকেই নিউইয়র্ক স্টেটে লকডাউন চলছে। কেবলমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পণ্য-সামগ্রির স্টোর লকডাউনের আওতামুক্ত। সে আলোকেই বাদলের স্টোর দুটি খোলা রাখতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। 

স্টোরের কর্মচারিাও বাদলের মতোই সেবার মনোভাব নিয়ে প্রতিদিনই কাজ করছেন বিপদগ্রস্ত গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটি সংলগ্ন লং আইল্যান্ডে সাধারণত: অধিক আয়ের পেশাজীবী, ব্যবসায়ীরা বসবাস করেন।

এ সত্বেও লং আইল্যান্ডেও ব্যপকভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় সকলেই গৃহে অবস্থানকেই নিরাপদ ভেবেছেন। কিন্তু লাগাতার গৃহবন্দি থাকায় অনেক কিছুরই প্রয়োজন হচ্ছে। এজন্যে বাসার বাইরে গেলেই মাস্ক, সেনিটাইজার লাগবেই। 

এমন চাহিদা পূরণে নিজের জীবন বাজি রেখে ‘ আরএলবি সেইফটি এ্যান্ড হার্ডওয়্যার স্টোর’ (লংবিচ রোড ও সানরাইজ হাইওয়ে) নিয়মিতভাবে চালু রাখার মধ্যে ‘বিশেষ মানবিকতা’র ছোঁয়া রয়েছে বলে অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদন ৪ মে প্রকাশ করেছে ‘লং আইল্যান্ড হেরাল্ড’ নামক জনপ্রিয় একটি পত্রিকা।

সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের মাঝ দিয়ে ‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়া আকতার হোসেন বাদল মূলধারার এই পত্রিকাকে বলেছেন, ‘চরম এই দু:সময়েও আমরা এলাকাবাসীর পাশে রয়েছি-এটি দৃশমান করতে প্রতিদিন স্টোর খোলা রাখছি। 

বাদল বলেছেন, ‘যাদের সাথে সারাবছর ব্যবসা করি, সেই কমিউনিটির এই দু:সময়ে পাশে থাকাকে আমি আমিার নৈতিক দায়িত্ব বিবেচনা করছি। সে তাগিদে সকলকে যথাসাধ্য হেল্্প করার চেষ্টা করছি।’

লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টিতে এ যাবত করোনায় মারা গেছে ১৮১৮ জন। একই এলাকার সাফোক কাউন্টিতে ইন্তেকাল করেছেন ১২৯৬ জন। ধারণা করা হচ্ছে, অধিবাসীদের প্রায় সকলের গৃহকর্মীরা হচ্ছেন মেক্সিকান কিংবা এশিয়ান। এদের মাধ্যমেই করোনার বিস্তৃতি ঘটতে পারে। 

এস এস