রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের জন্য বন্ধুকে গলাকেটে হত্যা করেছে অন্য মাদকাসক্ত বন্ধুরা। নিহত কলেজছাত্র সাইফ ইসলাম সানি হত্যাকাণ্ডের একদিন পরই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। পুলিশের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে সানি হত্যার এই রহস্য।
গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর থান্দারপাড়া গ্রামের ইদল আলীর ছেলে সাকিব (২৪) ও মৃত খায়েরের ছেলে সাগর (২৩)।
রবিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে তাদের সামনে এনে সংবাদ সম্মেলন করেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ।
অভিযুক্তরা জানায়, তারা দোকান থেকে ডেকে নিয়ে ফেনসিডিলের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে প্রথমে সানিকে অজ্ঞান করেন। পরে গলা ও হাত পায়ের রগ কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে মাদকের টাকা জোগাড় করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার রাজশাহীর চারঘাটে কলেজছাত্র নিখোঁজ ও মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার কথা জানান ও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সানি হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা সিরাজুল ইসলাম এদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশি তদন্তেও তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এরপর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান নামে পুলিশ।
শনিবার দিবাগত রাতে প্রথমে সাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। পর তার দেওয়া তথ্যে সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া নিহতের মোটরসাইকেল ও তার চাবি উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলায় সানির বাবা সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তার ছেলে সাইফ ইসলাম সানিকে (২৩) কাজ আছে বলে গত ৭ আগস্ট দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সানি তার লাল রঙের ১০০ সিসি হিরো মোটরসাইকেলে ডাকতে আসা সাকিবকে নিয়ে চলে যায়। এরপর থেকেই সানি নিখোঁজ ছিল। পর দিন ৮ আগস্ট সকালে চারঘাট থানার মসজিদপাড়া গ্রামের একটি পাকা রাস্তার ঢালে খেজুর গাছের নিচে গলাকাটা অবস্থায় সানির মরদেহ পাওয়া যায়। সানি নাটোর এনএস কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পরে চারঘাট থানা পুলিশ গিয়ে নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তারের পর থানায় নিয়ে তাদের দুইজনকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে তারা হত্যাকাণ্ডের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যে পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের আক্কাসের গ্যারেজ থেকে নিহতের মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সাকিবের ঘরের বিছানার নিচ থেকে মোটরসাইকেলের চাবি পায় পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, মোটরসাইকেলের লোভেই সানিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তারা হত্যা করেছে। এই মোটরসাইকেল বিক্রি করে তারা মাদক সেবনের টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। তারা প্রথমে কৌশলে ফেনসিডিলের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তা পান করিয়ে তাকে অচেতন করে। পরে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা ও হাত পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে মোটরসাইকেলটি নিয়ে ওই গ্যারেজে রেখে গা ঢাকা দেয়।
আদালতের মাধ্যমে রবিবার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এডিবি/
