ন্যাভিগেশন মেনু

মৌলভীবাজারের হাওরে বেড়েছে হাঁসের খামার


মৌলভীবাজার জেলা হাওর অধ্যুষিত। কাউয়াদিঘী, হাকালুকিসহ বিভিন্ন হাওরে বেড়েছে হাঁসের খামার। কৃষকদের গড়া একেকটি খামারে হাজারো হাঁস রয়েছে। এসব হাঁস হাওরের মাছ বা জলজ প্রাণী এবং জলজ উদ্ভিদ খেয়ে থাকে। শুকনো মৌসুমে খাল-বিল-নদীর অল্প পানিতেও রয়েছে পর্যাপ্ত হাঁসের খাবার।

বছরখানেক আগে একশ' হাঁস নিয়ে খামার চালু করেছিলেন সুবু মিয়া। এখন তার খামারে হাঁসের সংখ্যা ১ হাজার ৫০০। তার খামারে কাজ করে সংসার চালান আরও পাঁচ শ্রমিক। হাঁসের ডিম বেচে বছরে অনেক টাকা উপার্জন করেন তিনি।

সুবু মিয়া জানান, হাঁস ডিম দেওয়া বন্ধ করলে আমরা আর্থিক সংকটে পড়ে যাই। শ্রমিকদের মজুরি দিতে হিমশিম খেতে হয়।

লাভজনক হওয়ায় সুবু মিয়ার মতো হাওরপাড়ে এখন অনেকেই হাঁসের খামার করছেন।

সরজমিনে কাউয়াদিঘীর হাওরের মধ্যস্থলে গেলে চোখে পড়ে হাজার হাজার হাঁসের ঝাঁক। রাখাল যেমন গরুর পাল নিয়ে ছুটে চলে, তেমনি হাঁসের ঝাঁক নিয়ে ছুটে চলেন এর মালিক। দল বেঁধে এসব হাঁস হাওরের খাল-বিল-নদীর অল্প পানিতে মাছ বা জলজ প্রাণি কিংবা শেওলা খাচ্ছে। হাওরে মানুষ এসব হাঁস পালন করেন এবং এই হাঁসের ডিম, বাচ্চা ও বড় হাঁস বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।

জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারে ৪৩২টি হাঁসের খামার রয়েছে। খামারগুলোতে মোট হাঁসের সংখ্যা ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭০টি।

স্থানীয় আল আমিন জানান, ''হাওরের হাঁসের ত্যাল (তেল) হয় জব্বর।' এই হাঁসের স্বাদ অন্য হাঁস থেকে আলাদা বলেই এর বেশ কদর আছে স্থানীয় বাজারে। এই হাঁসের ডিমেরও অনেক চাহিদা। লাভজনক হওয়ায় হাওরপাড়ে এখন অনেকেই হাঁসের খামার করছেন। পাইকারি ক্রেতারা হাওরের খোঁয়াড় থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। সেই ডিম বাক্স ভর্তি হয়ে চলে যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।''

হাকালুকি হাওরের খামারি এখলাছ মিয়া বলেন, 'আমার খামারে ৩০০ হাঁস রয়েছে। হাঁসগুলোকে আমরা তিনজন মানুষ দেখাশোনা করে থাকি। দিনে হাওরে নিয়ে হাঁস চড়াই। বিকেলে আবার ঘরে তুলে আনি। মাসে অনেক টাকার ডিম বিক্রি করি। এই ডিমের টাকা দিয়ে আমার পরিবার চলে।'

হাওর পাড়ের বাসিন্ধা শামিম আহমদ বলেন, 'আরও অনেক মানুষ হাওরের হাঁসের খামার দেখে খামার গড়ে তুলতেছে। গত কয়েকবছরে কাউয়াদিঘী হাওরেই অনেক হাঁসের খামার তৈরী হয়েছে। এতে স্থানীয় অনেক মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এভাবে আরও খামার তৈরী হলে অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।'

স্থানীয় ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া বলেন, 'হাওরের খামারে উৎপাদিত ডিমের চাহিদা বাজারে অনেক বেশি দামও পাওয়া যায় বেশি। তবে এই ডিমের সংকট থাকে সব সময়। এই ডিম পেলে আমরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারি। ক্রেতার চাহিদাও বেশি থাকে।'

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: আব্দুস ছামাদ আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, হাওর অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলা হাঁস পালনে একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সবসময় সার্বিক সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।

এসএইচ/সিবি/এডিবি