ন্যাভিগেশন মেনু

মৌলভীবাজারে অলস মাঠে বেড়েছে সরিষা আবাদ


যেদিকে চোখ যায় শুধু সরিষার মাঠ। দিগন্ত জুড়ে হলুদের সমারোহ। স্বল্প পুঁজিতে ও কম সময়ে সরিষা চাষ করে লাভের আশা দেখছেন মৌলভীবাজারের কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় জেলায় সরিষার চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমন আর বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষ করে যেমন মাঠের উর্বরতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে তেমনি বাড়িতে আয়ের সুযোগ হয়েছে কৃষকদের।

মৌলভীবাজারের বিন্নার হাওরে এবার আঠারো বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষকেরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার একটু বেশি আবাদ হয়েছে। সরিষা ক্ষেতে ইতোমধ্যে বীজও আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষীরা।

এবার জমির পর জমিতে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ফুলে ফুলে মধু আহরণে ভিড় করছে মৌমাছিরা। অনেক জমিতেই ফুল শেষ হয়ে বীজ দেখা গেছে। আর চাষিরাও ভালো বীজের আশায় নিয়ম মাফিক পানি সেচ দিচ্ছেন জমিতে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ২৩২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ সম্ভব হয়েছে। যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর জেলাজুড়ে সরিষা আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। আবাদকৃত সরিষার মধ্যে রয়েছে বারি সরিষা ১৪, ৯, ১৫ ও ১৭ এবং বিনা সরিষা ৪ ও ৯ জাতের।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বিন্নার হাওরে গেলে কথা হয় চাষি রাজা মিয়ার সাথে।

তিনি আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, 'জমি চাষ দেওয়ার পর সার দিয়েছি পরে বীজ ছিটিয়েছি। পানির সেচও ভালো দিচ্ছি। গতবছর প্রথমবার হওয়ায় ভালো চাষ করতে পারিনি, সারও ভালো দেওয়া যায় নাই। এবার সারও ভালো দিয়েছি, চাষও ভালো করেছি। ফসলটাও ভালো হয়েছে। আরও পনেরো-বিশ দিন পর গাছে বীজ দিবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আগে আমাদের ময়-মুরব্বিরা সরিষার তেল খেতেন। এটা ভালো তেল। এখন অনেক জাতের তেল বের হয়েছে। কিন্তু সরিষা তেলের উপর কোন তেলই হতে পারে না।'

এই উপজেলার আজমেরু গ্রামের চাষি জাহিদ মিয়া আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, 'সরিষা চাষ গত বছরের তুলনায় এবার ভালো হয়েছে। গত বছর আমরা অনেক বেশি পানির সেচ দিয়েছিলাম কিন্তু এবার দিচ্ছি জেনারেটরের মাধ্যমে স্প্রে করে। যার কারণে প্রতিটি গাছের গোড়ায় পানি পৌঁছাতে পারে। সে কারনে ফলন ভাল হচ্ছে। গত বছর অনেক বীজই গজিয়ে উঠেনি। এবার অধিকাংশ বীজে গাছ হয়েছে। এখন পানি সেচ দিচ্ছি। আশাকরি ভাল ফলন হবে।'

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বছর লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে আমরা সরিষার অবাদটা বৃদ্ধি করছি যাতে ভোজ্য তেলের যে চাহিদা সেটা আমরা পূরণ করতে পারি। একই সাথে সরিষা থাকলে মধু চাষও বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত এলাকায় সেচের সুবিধা আছে, আমরা চেষ্টা করছি সেই সমস্ত এলাকায় স্বল্প মেয়াদের আমন ফসল। যেমন আমরা ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে আমন ফসল তুলে, বোরোর মাঝখানে যে সময়টুকু সেই সময়টুকুর মধ্যে সরিষা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে কৃষকরা বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।

এসএইচ/ ওয়াই এ/এডিবি