ন্যাভিগেশন মেনু

যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ট্র্যাজেডির ২০ বছর আজ


আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ট্র্যাজেডির ২০ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মাত্র ১০২ মিনিটের মধ্যে ঘটে যায় এই ভয়াবহ ঘটনা। সেদিন এই সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন দুই হাজার ৯৯৬ জন।

তাছাড়া, ৬ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয় এবং ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক অবকাঠামো ও সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়।

দিনটি ছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। বিশ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে চারটি যাত্রীবাহী জেট বিমান ছিনতাই করে সেগুলো দিয়ে আঘাত হানা হয় নিউইয়র্কের দুটি আকাশচুম্বী ভবনে, যে ঘটনায় নিহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। এই হামলা শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ একটি হামলা যা শুধু আমেরিকানদের নয়, গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল।

ছিনতাই হওয়া চারটি বিমানের মধ্যে দুটি বিমান বিধ্বস্ত করা হয় নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে। প্রথম প্লেনটি আঘাত হানে নর্থ টাওয়ারে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে। দ্বিতীয় বিমানটি সাউথ টাওয়ারে বিধ্বস্ত করা হয় এর ১৭ মিনিট পর, সকাল ৯টা ৩ মিনিটে।

এতে দুটি ভবনেই আগুন ধরে যায়। ভবন দুটির উপরতলায় মানুষজন আটকা পড়েন। শহরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দুটি টাওয়ার ভবনই ছিল ১১০ তলা। মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যে দুটি ভবনই বিশাল ধুলার ঝড় তুলে মাটিতে ভেঙে মিশে যায়।

তৃতীয় বিমানটি পেন্টাগনের সদর দপ্তরের পশ্চিম অংশে আঘাত হানে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে ছিল আমেরিকান প্রতিরক্ষা বিভাগের বিশাল এই সদর দপ্তর পেন্টাগন ভবন।

এরপর, সকাল ১০টা ৩ মিনিটে চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভেনিয়ার একটি মাঠে। ছিনতাই হওয়া চতুর্থ বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পর সেটি পেনসিলভেনিয়ায় বিধ্বস্ত হয়। ধারণা করা হয় ছিনতাইকারীরা চতুর্থ বিমানটি দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনে আঘাত হানতে চেয়েছিল।

এসব হামলায় সব মিলিয়ে মারা যায় দুই হাজার ৯৭৭ জন। এই হিসাবের মধ্যে ১৯ জন ছিনতাইকারী অন্তর্ভুক্ত নেই। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল নিউইয়র্কের লোক। চারটি বিমানের ২৪৬ জন যাত্রী এবং ক্রুর প্রত্যেকে মারা যান। টুইন টাওয়ারের দুটি ভবনে মারা যান দুই হাজার ৬০৬ জন। পেন্টাগনের হামলায় প্রাণ হারান ১২৫ জন।

ওই হামলার এক মাসেরও কম সময় পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ আফগানিস্তান আক্রমণ করেন। আল-কায়দাকে নিশ্চিহ্ন করতে এবং ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করতে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন এই অভিযানে যোগ দেয় আন্তর্জাতিক মিত্র জোট (ন্যাটো)।

যুদ্ধ শুরুর কয়েক বছর পর ২০১১ সালে মার্কিন সৈন্যরা অবশেষে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পায় প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে এবং তাকে হত্যা করে। এই যুদ্ধ চলে ১৯ বছর, ১০ মাস, তিন সপ্তাহ,দুই দিন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এই যুদ্ধে মারা গেছেন কমপক্ষে দুই হাজার ৩২৫ জন আমেরিকান সেনা। ঠিক কতোজন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে তার কোনও হিসেব নেই।

আফগান যুদ্ধকে বলা হতো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধ। মধ্যএশিয়ার ছোট দেশ আফগানিস্তান ছাড়িয়ে ইরাকে পৌঁছে যায়, এমন কি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে, দূর দুরান্ত আফ্রিকা পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ঘটে। ইরাকে এই সংঘাতে প্রায় চার হাজার ৫০০ আমেরিকান সেনা এবং লাখ লাখ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।

২০২১ সালের ৩১ আগস্টের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সমস্ত সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন।

সিবি/এডিবি/