ন্যাভিগেশন মেনু

সুনামগঞ্জে একদিনে ৬৫ মামলার ব্যতিক্রম রায়


সুনামগঞ্জে একসাথে ৬৫টি নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলায় সংসারে সম্মত হওয়ায় ৫৪ জন স্বামীকে স্বী-সন্তানের কাছে পাঠিয়েছেন আদালত। তাছাড়া, অন্য ১১টি মামলায় স্বামীদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে এসব মামলার রায় দেন সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো: জাকির হোসেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়,  নারী নির্যাতন ও যৌতুকসহ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ৬৫ জন নারী তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এসব মামলার বিচারকাজ চলছিলো। নির্যাতনের শিকার নারীরা তাদের সন্তানদের নিয়ে অনাহারে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে অনিশ্চিত এক জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অনিশ্চিত জীবন থেকে ৫৪ জন স্ত্রীকে স্বামীর কাছে আর সন্তানদেরকে তাদের বাবার পারিবারিক বলয়ে আবদ্ধ করে ব্যতিক্রমী আপোষের মাধ্যমে স্বামীদেরকে ভাল হওয়ার শর্তে রায় দিলেন আদালতের এ বিচারক।

তবে ১১টি পরিবারের নির্যাতিত স্ত্রী ও তাদের সাক্ষীরা স্বামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ায় এবং স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১১ স্বামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ রায়ে মামলার হয়রানি ও সংসার এবং দম্পতিদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ রায় দিয়েছে আদালত। প্রথমে তাদের স্বামীদের ভালো হওয়ার সুযোগ এবং আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে মিলিয়ে দেন। এতে করে দুইপক্ষ লাভবান হবেন এবং অনেক মামলার জট কমবে মনে করেন আইনজীবীরা। তাই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

একাধিক স্বামী-স্ত্রী জানান, 'দীর্ঘ দুই তিন বছর ধরে মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। খুবই কষ্ট হইছে। আমরা অসহায় ছিলাম। সন্তানরা ছিল আমাদের কাছ থেকে দূরে। ধ্বংসের পথে যাওয়া সংসার একত্রিত করে দেওয়ায় আদালতকে ধন্যবাদ জানান।'

বিবাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করা আইনজীবী অ্যাভোকেট ওবায়দুল হক চৌধুরী বলেন, বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। এই কলহের ফলে একটি দাম্পত্যজীবন নষ্ট হয়ে আদালতে এসে হয়রানি হয়। সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক নিজ উদ্দ্যেগে অনেকগুলো দম্পতির জীবন নষ্টের পথ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলাম। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ঠ। এরকম ব্যতিক্রমী রায়ে আদালতের কাছে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের সরকারি কৌশলী (পিপি) অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এর আগেও ৪৭টি মামলার একইভাবে রায় দেন  আদালত। এই রকম রায়ে আদালতে মামলা জট কমবে এবং মানুষ আদালতে ঘন ঘন হাজিরা দেওয়া থেকে রক্ষা পাবে। এভাবে দ্রুত মামলার রায় হলে বিচার প্রার্থী ও আইনজীবীদের জন্য ভালো দিক।

সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো: জাকির হোসেন বলেছেন, পরিবারে ঝামেলা থাকবে অভাব থাকবে সব কিছু মানিয়ে চলতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ নভেম্বর একই আদালতের বিচারক মো: জাকির হোসেন একদিনে পৃথক ৪৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলায় ৪৭টি পরিবারকে আপোষের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে পাঠিয়েছিলেন। এনিয়ে জেলায় মোট ১০১টি পরিবার ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেলো।

এএ/ ওয়াই এ/এডিবি